আবু তাহের, দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি : 
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুনামগঞ্জ জেলায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে দলটি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা।
ঘোষিত তিন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন —
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা) আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য আনিসুল হক।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও দিরাই) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত এই তিন প্রার্থী স্থানীয়ভাবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
বিএনপি নেতাদের মতে, এবারকার নির্বাচন দলটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বর্তমান সরকারের দমন-নীতি মোকাবিলায় মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতেই এই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। পোস্টার-ব্যানার টানানো, মিছিল ও শুভেচ্ছা সমাবেশের মাধ্যমে তারা নতুন করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, সুনামগঞ্জের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ-৩ ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনে ভোটযুদ্ধ হবে বেশ জমজমাট। ওই আসনগুলোতে প্রবাসী ও তরুণ ভোটারদের উপস্থিতিও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমরা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র রক্ষাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
অন্যদিকে, এখনো সুনামগঞ্জ-২ ও সুনামগঞ্জ-৪
আসনে প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, আলোচনার পর খুব শিগগিরই বাকি দুই আসনের প্রার্থীও ঘোষণা করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুনামগঞ্জের রাজনীতি সব সময়ই জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে কিছু এলাকা পরিচিত হলেও, অন্যদিকে বিএনপিরও রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে গভীর ভিত্তি। তাই এই জেলার প্রতিটি আসনই হবে হাই-প্রোফাইল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
বর্তমানে ঘোষিত তিন প্রার্থী তাদের নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ, কর্মীসভা ও প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করেছেন। দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতারাও নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএনপি আশাবাদী, জনগণের সমর্থন নিয়ে এবার তারা সুনামগঞ্জের অন্তত তিনটি আসনে জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে।
								
															



