জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে চোখ যতদূর যায়—শুধু সবুজের সমারোহ। এক পাশে যমুনার ঢেউ, অন্য পাশে দিগন্তজোড়া সবুজে ঢাকা মাসকালাইয়ের ক্ষেত। বাতাসে দোলে শস্যের চারা, মুখে হাসি ফুটেছে কৃষকের। কম খরচে বেশি লাভের আশায় এবারও কৃষকেরা ঝুঁকেছেন এ আগাম জাতের মাসকালাই চাষে।
উপজেলার চরগিরিশ, চরবেতকান্দি, মেঘাই, চাঁদপুর, শুলিপাড়া, নাটুয়ারপাড়া থেকে শুরু করে উল্লাপাড়া ও শাজাদপুরের মাঠজুড়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। ক্ষেত পরিদর্শন, আগাছা দমন, সেচ ও পরিচর্যায় সময় কাটছে তাদের দিন-রাত।
স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন,
“আমরা আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে বারি-৩ জাতের মাসকালাই চাষ শুরু করেছি। এখন ক্ষেতজুড়ে সবুজের ছায়া। ভালো ফলন হলে এবার একটু ঘুরে দাঁড়াতে পারব। এই ফসলের সবচেয়ে ভালো দিক হলো—কম খরচে ভালো দাম পাওয়া যায়।”
অন্য কৃষক হাফিজ উদ্দিন জানান,
“চরাঞ্চলের মাটি কালাই চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অন্য ফসলের মতো ঝুঁকি নেই। বর্ষা শেষে পতিত জমিতে সামান্য খরচেই কালাই চাষ সম্ভব। এর ডাল বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়, আবার গরুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।”
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট ৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে মাসকালাই চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যেই চাষ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে দেড় মাস আগে থেকেই চাষাবাদ শুরু করা হয়।
এবার কৃষকেরা মূলত বারি-৩, বারি-৪, বারি-৬ এবং বিনা-১ জাতের মাসকালাই চাষ করছেন। গত আগস্টের শেষের দিকে প্রায় ৪ হাজার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বারি-৩ জাতের বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার বলেন,
“আমরা প্রান্তিক কৃষকদের আগাম জাতের মাসকালাই চাষে উৎসাহিত করছি। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো পরিচর্যা হলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছি। এই ফসলের উৎপাদন খরচ কম, আবার বাজারে দামও ভালো—তাই কৃষকেরা লাভবান হবেন।”
চরাঞ্চলের পথে পথে এখন শুধু কৃষকের ব্যস্ততা। কেউ আগাছা তুলছেন, কেউ ক্ষেত সেচ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে মনে লালন করছেন একটাই আশা—ভালো ফলন হলে সংসারে আসবে স্বস্তি, মুখে ফুটবে হাসি।





