মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

“রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করুক, না হলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে” আসিফ নজরুল

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বৈঠক শেষে দুপুর ১২টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভার সিদ্ধান্ত ও সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। মাত্র ছয় মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন—

আজকের বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রণীত জুলাই সনদ ও তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। সভায় কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ, সংবিধান সংস্কার আদেশের চূড়ান্ত রূপদান এবং সম্ভাব্য গণভোট আয়োজনের দিকগুলো পর্যালোচনা করা হয়।

বৈঠকে লক্ষ্য করা হয়, কমিশনের প্রস্তাবিত বেশ কিছু সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বিশেষত, গণভোটের সময়সূচি ও আলোচ্য বিষয়বস্তু নিয়ে ভিন্ন অবস্থান থাকায় উপদেষ্টা পরিষদ উদ্বেগ প্রকাশ করে।

এই প্রেক্ষাপটে সভায় সিদ্ধান্ত হয়— গণভোটের সময় ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ, জুলাই সনদের বিতর্কিত দিকসমূহের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদ সভায় আহ্বান জানায়— ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিনের সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো যেন নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের কাছে একটি ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেয়। তাতে সরকারের পক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

সভায় আরও বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। সরকারের লক্ষ্য ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা— এই অঙ্গীকার আবারও পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। তারা যদি সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সরকার কী করবে?”

এর জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা কোনো আলটিমেটাম দিইনি, সেই শব্দের সঙ্গে আমি একমত নই। আমরা অপেক্ষা করব, তারপর সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে।”

আরেক প্রশ্নে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আগের সংবাদ সম্মেলনে আমি বলেছিলাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ— সেটিই বহাল আছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রস্তাব আমরা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছি, এটিকে আপনি সরকারের সদিচ্ছা হিসেবেও দেখতে পারেন।”

সরকার কি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন করে সংলাপ আয়োজন করবে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকার এর আগে অনেকবার সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে, এখন আর নতুন কোনো আয়োজন করা হচ্ছে না। ১৫ বছর একসাথে সংগ্রাম ও আন্দোলন করা দলগুলো নিজেদের উদ্যোগে আলোচনা করে সরকারকে একটি অভিন্ন প্রস্তাব দেবে— এই প্রত্যাশা করছি। ইতোমধ্যে একটি দল আলোচনা আহ্বান জানিয়েছে, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই।”

শেষে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে, “কিছু রাজনৈতিক দল বলছে, ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের সময় বিকৃতি ঘটেছে”— এর উত্তরে আসিফ নজরুল বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের আপাতত কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের কাছে সুপারিশ দেবে— সেটাই আমরা আশা করছি। যদি তারা কোনো অভিন্ন সিদ্ধান্তে না পৌঁছায়, তাহলে সরকার নিজের দায়িত্ব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।”

শেয়ার করুন