রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

“দেশীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য ইসির নির্বাচন নীতিমালা জারি”

সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫’ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নীতিমালা শুধুমাত্র দেশীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে তা জানা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বাড়িয়ে ভোটারের আস্থা বৃদ্ধি করা। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়া:
পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে নিবন্ধনের জন্য দৈনিক পত্রিকায় ১৫ দিন সময় দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। আগ্রহী সংস্থা নির্ধারিত ফরম (EO-1) এবং বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত দলিলাদি জমা দেবে।

আবেদনের যোগ্যতা:
বেসরকারি সংস্থা যারা গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং যাদের নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নাগরিকদের তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণের অঙ্গীকার রয়েছে, তারা আবেদন করতে পারবে।

অযোগ্যতা:
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তি, অথবা যারা আবেদনকালে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাদের সংস্থা নিবন্ধন পাবে না। সংস্থাটি হলফনামা দাখিল করবে যে তাদের প্রধান নির্বাহী বা পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়।
জাতীয় বা আন্তর্জাতিক/আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে হুবহু মিল বা কাছাকাছি নাম ব্যবহার করলে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, এমন সংস্থা নিবন্ধন পাবেনা। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থার লিখিত অনাপত্তিপত্র থাকলে বিবেচনা করা যেতে পারে। পূর্বে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন দাখিলকারী সংস্থারও নিবন্ধন হবে না।

নিবন্ধনের মেয়াদ ও নবায়ন:
প্রত্যেক সংস্থার নিবন্ধনের মেয়াদ ৫ বছর। মেয়াদ শেষ হলে শর্ত সাপেক্ষে নবায়ন সম্ভব। নিবন্ধন পাওয়ার পর পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদের অন্তত একটি সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের কমপক্ষে চারটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। প্রতি দুই বছর অন্তর দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদনও দাখিল করতে হবে। সংস্থাগুলোকে নির্বাচনী নীতিমালা ও দেশের আইন-বিধি মেনে চলতে হবে।

পর্যবেক্ষকের যোগ্যতা ও মোতায়েন:
১. বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
২. বয়স ২১ বছর বা তদূর্ধ্ব হতে হবে।
৩. ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক (এইচ.এস.সি.) বা সমমান উত্তীর্ণ হতে হবে।
৪. কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হতে হবে।
৫. কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।
৬. রাজনৈতিক দল বা এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কেউ পর্যবেক্ষক হতে পারবে না।
৭. মোতায়েনের একক ইউনিট হবে উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানা অথবা সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা।
৮. পর্যবেক্ষককে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার হওয়া যাবে না।
৯. নিবন্ধিত সংস্থা নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরের দিন (মোট ৩ দিন) পর্যবেক্ষক মোতায়েন করতে পারবে।

বাতিল প্রক্রিয়া:
নীতিমালা লঙ্ঘন বা রাষ্ট্র-বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কমিশন সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ১০ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে নোটিশ পাঠাবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে বা অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত গণ্য হবে।

শেয়ার করুন