বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দীর্ঘদিন পর জনগণ একটি উৎসবমুখর ও স্বাধীন পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছে। এবার জনগণই নিজেদের ভোটাধিকার রক্ষা করবে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করবে। তাঁর ভাষায়, “ভোট পাহারা দেবে জনগণই, এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ, মুখ্য ভূমিকা পালন করবে ভোটাররা।” সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশ ও দৈনিক প্রথম আলো।
এই আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রাজনৈতিক দল ও জনগণ। নির্বাচন কমিশন কেবল নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শৃঙ্খলা বজায় রাখে, আর সরকারের কাজ থাকে প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়া।” তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়—সেই লক্ষ্যেই সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপি তার পক্ষ থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।”
বিএনপি নেতা জানান, তাঁদের দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতিশ্রুতিতে অটল। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ পতনের পর যদি জনগণের ভোটে আমরা জয়ী হই, তাহলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকারের মাধ্যমে বিএনপির প্রস্তাবিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা হবে।” তিনি জানান, এই ৩১ দফার মধ্যে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম ও প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে একাধিক কমিশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় যে কমিশনগুলো কাজ শুরু করেছে, সেগুলোকে ভিত্তি ধরে আরও নতুন করে কমিশন গঠন করা হবে। তাঁর মতে, “সংস্কারের প্রস্তাবগুলো জাতির জন্য উন্মুক্ত থাকবে—সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণে জনগণের কোনো প্রস্তাব পাওয়া গেলে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।”
গোলটেবিল বৈঠকে একশনএইড বাংলাদেশের উইমেন রাইটস লিড মরিয়মনেছা দেশের নয়টি জেলায় অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী আলোচনাগুলোর সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। এ আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ।
