বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত

চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেওয়ার সময় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। একই ঘটনায় চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন। বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকরা সরোয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন। এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির এই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সরোয়ার হোসেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ৫ আগস্টের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র আইনের এবং চাঁদাবাজির মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা।

গত ২৯ মার্চ রাত পৌনে ৩টার দিকে নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডে সরোয়ারের প্রাইভেটকারে গুলি চালানো হয়। এতে গাড়িতে থাকা দুজন নিহত হন; তারা হলেন বখতিয়ার হোসেন মানিক (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩৬), সরোয়ারের সহযোগী। একই সময় সরোয়ার ও তার দুই সহযোগী রবিন এবং হৃদয় গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর থেকে সরোয়ারের অবস্থান অজানা ছিল। স্থানীয় সূত্র বলছে, তিনি কারও রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন।

বিএনপি দাবি করেছে, সরোয়ার তাদের কেউ নন। জনসংযোগ অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ অংশ নেন। এ সময় গুলিতে সরোয়ার নিহত হন এবং প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও আহত হন।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ সরোয়ারের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।

এর আগে বিকালে নগরের চালিতাতলী এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন সরোয়ার। এতে তিনজন – এরশাদ উল্লাহ, সরোয়ার ও শান্ত – গুলিবিদ্ধ হন, যাদের মধ্যে সরোয়ার মারা যান।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে সরোয়ারের প্রাইভেটকারে গুলি করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেই সময় দুজন নিহত হন এবং সরোয়ার বেঁচে যান। গ্রেফতার আসামিরা জানিয়েছে, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে এই হামলা করা হয়।

ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক এবং শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। এক সময় সরোয়ারও তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু ২০১৫ সালের পর তারা থেকে সরোয়ার বিচ্ছিন্ন হন।

২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাটে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটজন নিহত হন। এই ঘটনার মামলায় সাজ্জাদ আলী সাজাপ্রাপ্ত হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান এবং বিদেশে চলে যান। সেখানে তিনি তার বাহিনী ব্যবহার করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ পরিচালনা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সরোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেছেন। তার বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে দেখা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় বিএনপির কোনও যোগ নেই। প্রার্থীর জনসংযোগে শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সরোয়ারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং দুই সন্ত্রাসীর পূর্ববিরোধের কারণে গুলি চালানো হয়। এ সময় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও আহত হন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, “এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী সরোয়ার নিহত হয়েছে।”

শেয়ার করুন