রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়ে বিতর্কে কংগ্রেস কর্মী বিদ্যুৎ ভূষণ

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গান গেয়ে বিপাকে পড়েছেন ভারতের আসাম রাজ্যের কংগ্রেস সেবা দলের কর্মী বিদ্যুৎ ভূষণ দাস (৭৪)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার গাওয়া ওই গানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রাজ্যজুড়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েকজন মন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য শাখাও সেটি শেয়ার করেছে। তাদের অভিযোগ— বিদ্যুৎ ভূষণ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়েছেন, যা ভারতের জাতীয় মর্যাদার প্রতি অসম্মান।

তবে বিদ্যুৎ ভূষণ দাস দাবি করেছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং শৈশবের স্মৃতি ও মনের টানে গানটির একটি লাইন উচ্চারণ করেছিলেন। তার ভাষায়, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই গানটি ভালোবাসি। হঠাৎই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে লাইনটি মুখে চলে আসে। আমি কবিকে ও বাংলাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি, কোনো দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করিনি।’

কংগ্রেস সেবা দল হলো ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তৃণমূল পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। বিদ্যুৎ ভূষণ গানটি গেয়েছিলেন আসামের শ্রীভূমি জেলার এক অনুষ্ঠানে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি পুলিশকে শ্রীভূমি জেলা কংগ্রেস কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘কংগ্রেস ভারতের জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেছে, যা দেশের প্রতি অসম্মানজনক।’

কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা অবশ্য অভিযোগটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে, বিদ্যুৎ ভূষণ একজন প্রবীণ কর্মী, যিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তিনি শুধু বক্তৃতার অংশ হিসেবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওই লাইনটি উচ্চারণ করেছিলেন।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আরও জানিয়েছে, আসামের শ্রীভূমি (আগের নাম করিমগঞ্জ) একসময় বাংলাদেশের সিলেট জেলার অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সিলেটের মূল অংশ পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে) অন্তর্ভুক্ত হলেও শ্রীভূমি অঞ্চলটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

এই ঐতিহাসিক পটভূমি ও সাংস্কৃতিক মিলের কারণে গানটি এখনো ওই অঞ্চলের অনেক মানুষের কাছে আবেগের প্রতীক হিসেবে টিকে আছে, যদিও সেটি এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

শেয়ার করুন