আব্দুর রহিম রানা, যশোর প্রতিনিধি :
বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার যশোর টাউন হল ময়দানে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তরিকুল ইসলাম ছিলেন নীতিবান, আদর্শিক ও আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিক। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জনগণের স্বার্থরক্ষায় তিনি কখনো আপোষ করেননি।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন।
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, “তরিকুল ইসলাম ছিলেন মাঠের মানুষ। ক্ষমতার রাজনীতিতে নয়, তিনি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে রাজনীতিতে উঠে এসেছিলেন। নির্যাতন-নিপীড়নের কঠিন সময়েও তিনি আদর্শ থেকে সরে যাননি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতিটি আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন।” তিনি আরও বলেন, “আজকের সংকটকালীন বাস্তবতায় তাঁর মতো নেতৃত্ব দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।”
জাতীয় পরিস্থিতির প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেই দিন দেশপ্রেমিক জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিকে বড় সংকট থেকে রক্ষা করেছিলেন। আজও দেশের গণতন্ত্র একই সংকটে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। নির্বাচনে টালবাহানা বা পক্ষপাতমূলক আচরণের পরিণাম শুভ হবে না।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই থামবে না।” এ সময় তিনি দলের পক্ষ থেকে যশোর জেলার পাঁচটি আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং ধানের শীষের পক্ষে সমর্থন চান।
অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব বলেন, তরিকুল ইসলাম ছিলেন শৃঙ্খলাবদ্ধ, ভদ্র ও মানবিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সব সময় তিনি দলীয় কর্মীদের উত্সাহ দিয়েছেন সৎ রাজনীতি করার জন্য। মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, তাঁর মন্ত্রিত্বকাল ছিল স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত। ব্যক্তিগত স্বার্থকে কখনো তিনি রাজনৈতিক দায়িত্বের ওপরে স্থান দেননি।
কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে যশোর বিএনপি শক্ত ভিত পায়। তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণে তিনি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সাবিরা সুলতানা মুন্নি বলেন, নারী নেতৃত্বের প্রতি তিনি সব সময় সম্মান ও সহযোগিতা দেখিয়েছেন। অমলেন্দু দাস অপু বলেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গেও তিনি ভদ্রতা বজায় রেখেছিলেন—যা বর্তমান রাজনীতিতে বিরল।
সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান বলেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে তরিকুল ইসলামের অবস্থান ছিল স্পষ্ট ও অনড়। সত্য প্রকাশে তিনি সাংবাদিকদের সব সময় উৎসাহিত করেছেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন , জাহানারা সিদ্দিক, জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, আলী আহম্মদ, মনোয়ার হোসেন, হাসান জহির, তানিয়া রহমান, জহুরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে যশোর একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব হারিয়েছে। তাঁর সততা, মূল্যবোধ ও প্রজ্ঞা তরুণ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নার্গিস বেগম, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। স্মরণসভা শেষে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।





