রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপি স্থায়ী কমিটি: কমিশনের সুপারিশে বিভাজন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় হুমকি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি একটি মূল অংশীদার হলেও তার দলের প্রস্তাবসমূহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশে প্রতিফলিত হয়নি। বরং বিএনপি যেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে, কমিশনের সুপারিশে সেগুলোই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘অনৈক্য কমিশন’-এর উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা জমা দেয়। তবে এতে বিএনপির মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা হয়নি, যা দলের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

সেদিনই গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভার সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দল মনে করছে, কমিশনের সুপারিশে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মতামত সযত্নে প্রতিফলিত হয়েছে, যা সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সরকার ও কমিশন পরিকল্পিতভাবে দলটিকে প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শিগগিরই বিএনপি প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী সংসদ ২৭০ দিন (প্রায় ৯ মাস) ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে সময়মত সংস্কার সম্পন্ন না হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

বিএনপি নেতারা এই প্রস্তাবকে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও আইয়ুব খানের ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ ও ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, কমিশনের প্রস্তাবে নির্বাচিত দলের মতামতকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের সমতুল্য।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উল্লেখ করেন, ১৭ অক্টোবর ২৫টি রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরের পর কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। তার মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করাই এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য।

আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা কখনও রেফারিকে গোল দিতে দেখিনি। এখন মনে হচ্ছে, কমিশন, সরকার ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এক হয়ে গেছে।”

বিএনপি নেতাদের মতে, ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম গণ-অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ঐক্যের বদলে বিভাজন সৃষ্টি করছে, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

শেয়ার করুন