শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জামায়াতের মনোনয়ন বিতর্কে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অসন্তোষ প্রকাশ

কুমিল্লার চান্দিনায় সংসদীয় প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলের দুই শাখা—মোশারফ গ্রুপ ও ব্যারিস্টার শাকের গ্রুপ—একটি তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়েছে। হাতাহাতি এবং প্রকাশ্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, খুব দ্রুতই এই দ্বন্দ্ব সমাধান করে দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করা হবে এবং সেটি গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, দলটির দীর্ঘদিনের শান্তশিষ্ট চরিত্র থেকে এই ক্ষোভের প্রকাশ নতুন মাত্রা পেয়েছে। অতীতে এমন বিভাজন চোখে পড়েনি, তাই এলাকার সাধারণ মানুষ এই পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়েছেন। দলীয় নিয়মনীতি ও আদর্শকে উপেক্ষা করে দুই গ্রুপ এখন প্রকাশ্যভাবে সংঘাতে জড়িয়েছে। এদিকে দলের সিনিয়ররা চেষ্টা করছেন উভয় পক্ষকে মিলিত করে একযোগে কাজ করানোর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-৭ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন ঘোষণায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দল এমপি প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোশারফ হোসেনকে ঘোষণা করেছে। এতে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একাংশ প্রার্থীকে ‘আওয়ামী লীগের সমর্থক’ বলে অভিযোগ করছেন। স্থানীয় কিছু নেতার মতে, প্রার্থী মোশারফ হোসেন সাবেক সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের ঘনিষ্ঠ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার বহু বৈঠক ও ছবি রয়েছে।

গত সোমবার চান্দিনায় জামায়াতের কুমিল্লা উত্তর জেলা আয়োজিত গণমিছিলেও এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়। মিছিল চলাকালীন সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহ গ্রুপ ও মনোনীত প্রার্থী মোশারফ হোসেনের গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শাকের গ্রুপের অনুসারীরা ‘দল বিক্রি চলবে না, আওয়ামী লীগের দোসর প্রার্থী নয়’ শ্লোগান দেন এবং মোশারফ হোসেনের হাতে থাকা মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নেন।

দলীয় সূত্র জানায়, নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। তাদের অভিযোগ, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে এবং মাওলানা মোশারফকে অযথাযথভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহ বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই দল গ্রহণ করেছে, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না।

চান্দিনা উপজেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি সাজিদ আল আমিন সোহাগ অভিযোগ করেন, মোশারফ হোসেন সাবেক সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপালের ঘনিষ্ঠ, এবং তার বিভিন্ন বৈঠক ও ছবি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রমাণ করে। তাই তাকে প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।

চান্দিনা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার শাকের উল্লাহ সমর্থিত নেতাকর্মীরা তা মানছে না। তবে আমরা আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য কাজ করছি এবং শিগগিরই সবাই এক হয়ে মাঠে কাজ করবে।

মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মোশারফ হোসেন বলেন, নেতাকর্মীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি আদর্শ ও নীতির সঙ্গে আপস করেননি। স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেওয়াকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তবে তিনি আশা করেন, নেতাকর্মীরা শীঘ্রই মিলেমিশে কাজ শুরু করবেন।

কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল মতিন বলেন, চান্দিনার এই বিরোধ খুব শিগগিরই মিটে যাবে। এটি এক ক্ষুদ্র বিষয়, আমরা আদর্শের রাজনীতি করি এবং স্বার্থের জন্য কাউকে ব্যবহার করা হবে না। দল এক হয়ে কাজ করবে।

শেয়ার করুন