সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভোটারদের সময় মাত্র ১৪ সেকেন্ড

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এ সময় ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া, ফলাফল তৈরির প্রক্রিয়া, নির্বাচনী আচরণবিধি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

৪৩ ভোট দিতে সময় ১০ মিনিট

একজন ভোটারকে রাকসু নির্বাচনে মোট ২৩টি পদে, হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টি পদে মিলিয়ে মোট ৪৩টি ভোট দিতে হবে। এসব ভোট দিতে ভোটার সময় পাবেন ১০ মিনিট। ফলে গড়ে প্রায় ১৪ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে শিক্ষার্থীকে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।

যেভাবে ভোট দেবেন ভোটাররা

সভায় নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, একজন প্রার্থীর ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করে পোলিং অফিসারের কাছে তালিকায় স্বাক্ষর করে ভিন্ন রঙের ছয়টি ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। পরে গোপন বুথে গিয়ে তা পূরণ করতে হবে।

প্রথম ব্যালট পেপারে থাকবে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থীর তালিকা; দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যালটে থাকবে বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদের প্রার্থীদের নাম; পঞ্চম ব্যালটে থাকবে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ও সবশেষে ষষ্ঠ ব্যালটে থাকবে হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা। ভিন্ন রঙের ব্যালট গোপন বুথে পূরণ শেষে ভোটারদের ভিন্ন ভিন্ন রঙের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে রাখতে হবে।

ভোট প্রদান করতে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা কাগজে প্রার্থীর নাম লিখে নিয়ে যেতে পারবেন। প্রার্থীরাও তাঁদের প্যানেলের তালিকা ভোটারদের দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘আমরা ডাকসু ও জাকসুতে ভোটারদের প্যানেলের তালিকা দেওয়ার বিষয়ে অনেক অভিযোগ দেখেছি। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সব প্রার্থী ও প্যানেল তাঁদের প্যানেলের তালিকা

ভোটারদের দিতে পারবেন। কারণ আমরা দেখেছি, একজন ভোটারের পক্ষে একসঙ্গে ৪৩ প্রার্থীর নাম মনে রাখা সম্ভব নয়। ভোটার যেন কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করেন, এ জন্যই আমরা কাগজ নিয়ে প্রবেশের সুযোগ রাখছি।’

তিন ধাপে তৈরি হবে চূড়ান্ত ফলাফল

নির্বাচন কমিশনার জানান, একাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে সব কেন্দ্রের ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভিন্ন ভিন্ন বাক্সের ব্যালট বের করে ১০০টি করে আলাদা আলাদা বান্ডেল করা হবে। প্রতিটি বান্ডেল ওএমআর মেশিনে দিয়ে গণনা করা হবে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ প্যানেল আধুনিক এ ফলাফল পর্যবেক্ষণ করবেন। সর্বমোট তিনটি ধাপে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি হবে। এভাবে একটি হলের ফলাফল তৈরি হলে অন্য হলেরটা শুরু হবে। সব ফলাফলের কাজ সম্পন্ন হতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৯ শতাধিক বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সম্পূর্ণ সিসিটিভির আওতাভুক্ত। ভোট গ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা করা হবে। এখানে সাংবাদিকেরা তাঁদের সম্প্রচার কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া ভোটগণনার সব প্রক্রিয়া মিলনায়তনের সামনে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে।

নিরাপত্তায় কেন্দ্রের ৪০০ গজ দূরে চৌহদ্দি

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কেন্দ্রের ৪০০ গজ দূরে একটি চৌহদ্দি (চারদিকের সীমানা) নির্ধারণ করা হবে। এর ভেতরে কোনো প্রার্থী প্রচার চালাতে পারবেন না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যে চৌহদ্দি দেওয়া হবে, এর ভেতরে ঢুকে কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এ ছাড়া প্রার্থীরা ভোটারদের যে প্রার্থী তালিকা দেবেন, সেটা নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হওয়ার পর না দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়ন করা হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমরা খুবই আশাবাদী এবং নির্বাচনী পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর। ভালো লাগছে এটা দেখে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই প্রচারণা চালাচ্ছে। টুকটাক যে দুই-একটা ব্যত্যয় ঘটছে না, তা নয়; তবে বড় কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। সিন্ডিকেট থেকে যে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী, তারা এখন পর্যন্ত ধৈর্য রেখে কাজ করছে।’এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান। সভায় নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট ও প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন