লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় হিফজ বিভাগের ৮ বছর বয়সী এক শিশু সহ একাধিক শিশুদের ভয়ংকরভাবে জোর করে বলাৎকারের অভিযোগে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৪-নভেম্বর) রাতে উপজেলার কালেঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুনারুঘাট তাহসিনুল কোরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ইমরান হোসাইন (৩২) কে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একই উপজেলার কালেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে ওইদিন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী শিশুর মা চুনারুঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২ নভেম্বর রাতে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ওই ছাত্রকে (বয়স ৮) ইমরান হোসাইন অফিস কক্ষে ডেকে নেন। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে শিশুটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শারীরিক নির্যাতন (বলাৎকার) করেন। পরদিন শিশুটি মাদ্রাসায় যেতে অনীহা প্রকাশ করলে পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আলোচনার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় শিশুর মা’ বলেন ওই মাদ্রাসার হুজুর আমার ঘুমন্ত ছেলের পাশাপাশি আরও একাধিক শিশুকে বারবার ভয়ংকরভাবে জোর করে বলাৎকার ও ঘৃণ্য খারাপ কাজ করেছেন। আমার ছেলেকে সুশিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি তাকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলাম। কোনো মা-ই তার সন্তানকে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পাঠান না। আমি একজন মা হিসেবে এর কঠোরতম বিচার দাবি করছি।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই আসামিকে গ্রেপ্তার করে (৫ নভেম্বর) আদালতে সোপোর্দ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুকে চিকিৎসা ও মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। মাদ্রাসার একাধিক শিশুর ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ইমরান হোসাইন দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন রাতেই তিনি ঘুমন্ত শিশুদের তুলে নিয়ে যেতেন তার অফিস কক্ষে এবং এমন জঘন্য কাজ করতেন।
যদি কোনো শিশু চিৎকার করার বা প্রতিরোধের চেষ্টা করত, তবে তাদেরকে নির্মমভাবে মারপিট করা হতো এবং হত্যার ভয় দেখানো হতো। এই ভয়ংকর হুমকির ফলেই শিশুরা এতদিন মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এ ঘটনায় পূর্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ছেড়ে গেছে বলেও জানা যায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরান হোসাইন বলেন, আমাকে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে ফাঁসানো হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। এদিকে অভিভাবকরা ওই মাদ্রাসার সকল নির্যাতিত শিশুর প্রতি যে অমানবিক ও জঘন্য অপরাধ করা হয়েছে এইজন্য, অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিশুকে আর এমন পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়।




