হলিউডের তরুণ তারকাদের মধ্যে সিডনি সুইনির নাম মানেই আলোচনার ঝড়। কখনো তাঁর পর্দার সাহসী দৃশ্য নিয়ে সমালোচনা, কখনো আবার বিজ্ঞাপন প্রচারণা ঘিরে বিতর্ক—সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন এই মার্কিন অভিনেত্রী। সম্প্রতি নিজের নতুন ছবি ‘ক্রিস্টি’-র প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনকে দিয়েছেন এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, যেখানে উঠে এসেছে তাঁর ক্যারিয়ার, বিতর্ক, আত্মবিশ্বাস ও নতুন জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রায় এক দশকের অভিনয়জীবনে ২৫ বছর বয়সী সুইনি আলোচনায় আসেন ২০১৯ সালে এইচবিওর আলোচিত সিরিজ ইউফোরিয়া দিয়ে। সিরিজটি তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, আর দ্য হোয়াইট লোটাস তাঁকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়। জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে, তেমনি সমালোচনার মুখেও পড়েছেন নানা সময়—চরিত্র বাছাই, সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ছবি কিংবা সাক্ষাৎকারে খোলামেলা মন্তব্য, সব কিছু নিয়েই আলোচনা।

সুইনি বলেন, “আমি এখন বুঝি আমার অবস্থান কোথায়। প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন শিখি, চিন্তা করি, উন্নতির চেষ্টা করি—এভাবেই আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে।” তিনি যোগ করেন, “আমি উপলব্ধি করেছি জ্ঞানই আসল শক্তি। এটা বোঝার পর মনে হয়েছে আমি অনেক স্বাধীন। ইউফোরিয়া-র চরিত্রটি আমাকে সেই বোধটাই দিয়েছে।”
শুরুর দিকে অনেকে ভেবেছিলেন, সুইনি কেবল গ্ল্যামারাস চরিত্রেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু রিয়েলিটি ছবিতে গ্ল্যামারহীন এক চরিত্রে অভিনয় করে সেই ধারণা ভেঙেছেন তিনি। ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে খ্যাতি নিয়ে ভাবেন না তিনি। তাঁর ভাষায়, “আমি এখনো নিজেকে বড় অভিনেত্রী মনে করি না। আমার লক্ষ্য হলো চরিত্রের প্রতি সৎ থাকা এবং প্রতিবারই আরও ভালো করা।”
অভিনয়জীবনের প্রথম দিকের কষ্টের সময়ের কথাও বলেন তিনি—“একসময় এমন হতো, সপ্তাহে দশটা অডিশন দিতাম, কিন্তু ডাক আসত না একটাতেও। তবে আমি কখনো হাল ছাড়িনি, কারণ বিকল্প পরিকল্পনা মাথায় ছিল।”

ইউফোরিয়া-তে সাহসী দৃশ্যগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন সুইনি। ডেডলাইন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি অভিনেত্রী, আমাকে চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী অভিনয় করতে হয়। তাই যত বিতর্কই হোক, প্রয়োজন হলে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করব।” সিরিজটির নির্মাতা স্যাম লেভিনসনের কাজ তিনি খুব পছন্দ করেন বলেও জানান।
তবে সমালোচনায়ও আঘাত পেয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “মানুষ আমার অভিনয়ের চেয়ে শরীর নিয়ে বেশি কথা বলে। ছোটবেলা থেকেই চেয়েছি, মানুষ যেন আমার কাজ নিয়েই আলোচনা করে। স্কুলে খেলাধুলা করতাম, পড়াশোনায় মন দিতাম, যেন কেউ ভাবতে না পারে আমি শুধু দেহসর্বস্ব।”
সম্প্রতি আমেরিকান পোশাক ব্র্যান্ড আমেরিকান ইগল–এর বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন সুইনি। বিজ্ঞাপনে তিনি বলেন, “জিনস মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া, যা আমাদের চোখের রং বা ব্যক্তিত্বের মতো।” এখানে “জিনস (jeans)” আর “জিনস (genes)”–এর শব্দখেলা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, বিজ্ঞাপনটি বর্ণবাদী ইঙ্গিত বহন করে; অন্যদিকে কেউ কেউ একে স্রেফ অতিরঞ্জিত প্রতিক্রিয়া বলে মন্তব্য করেছেন।
পরিচালক ডেভিড মিচোডের নতুন ছবি ক্রিস্টি–তে সুইনি অভিনয় করেছেন বক্সার ক্রিস্টি মার্টিনের চরিত্রে। চরিত্রের জন্য তাঁকে ৩০ পাউন্ড পেশি বাড়াতে হয়েছে। মিচোড জানান, প্রথমে তাঁর নাম তালিকায় ছিল না, কিন্তু রিয়েলিটি দেখার পর সিদ্ধান্ত বদলান তিনি।
সিডনি বলেন, “ক্রিস্টির চরিত্রে রিং আমার কাছে স্বাধীনতার প্রতীক। আমি এমন চরিত্র পছন্দ করি, যেগুলো দর্শকের জন্য সহজ নয়, কিন্তু যাদের প্রতি সহানুভূতি জাগানো সম্ভব।” ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী ৭ নভেম্বর।
সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই গুজব চলছে, সুইনি নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ভ্যারাইটি-কে বলেন, “আমি কোনো ইনজেকশন, সার্জারি, ট্যাটু—কিছুই করিনি। আমি যেমন আছি, তাতেই খুশি। বয়স বাড়লে যেভাবে দেখাব, সেটাই আমার বাস্তব।”
সম্প্রতি ইউফোরিয়া-র তৃতীয় মৌসুমের কাজ শেষ করেছেন সুইনি। শোনা যাচ্ছে, তিনি হতে পারেন নতুন বন্ড গার্ল। এ বিষয়ে হাসতে হাসতে বলেন, “এখনো গুজবই বলা যায়, তবে সত্যি হলে দারুণ কিছু হবে!”






