জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর :
সাগর-রুনি দম্পতিসহ দেশের সকল সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার, নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন এবং চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহালের দাবিতে যশোরে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর (জেইউজে)-এর আয়োজনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরাও সংহতি প্রকাশ করেন।
মানববন্ধনে সাংবাদিকরা ব্যানার, ফেস্টুন ও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিবাদ জানান। ব্যানারে লেখা ছিল— “সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই”, “সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করো”, “ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করো”, “চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল করো” ইত্যাদি স্লোগান।
সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সহকারী মহাসচিব নুর ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাবেক সভাপতি এম আইউব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান, সাংবাদিক নেতা সরোয়ার হোসেন, কাজী আশরাফুল আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল্লাহ হুসাইন, তরিকুল ইসলাম তারেকসহ আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, এক যুগ আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নির্মমভাবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি খুন হন। দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ হয়নি, বিচার তো দূরের কথা। এটি দেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এক দশক পেরিয়ে গেলেও যখন সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না, তখন সাধারণ সাংবাদিকরা কতটা অনিরাপদ— তা সহজেই অনুমেয়।”
বক্তারা আরও বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও মিথ্যা মামলার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, যা পেশার প্রতি নিরুৎসাহ তৈরি করছে। তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান।
এছাড়া বক্তারা নবম ওয়েজ বোর্ডের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনেরও দাবি জানান। তাদের মতে, গণমাধ্যম কর্মীদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত না হলে পেশার মর্যাদা ও সাংবাদিকতার মান দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্মরত সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই সাংবাদিকতার মূল কাজ, অথচ আজ সেই সাংবাদিকদেরই নানা অজুহাতে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। যারা কলম দিয়ে সত্য প্রকাশ করেন, তাদের ওপর নানা রকম চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে এবং অযৌক্তিকভাবে চাকরিচ্যুত সব সাংবাদিককে দ্রুত পুনর্বহাল করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জেমস আব্দুর রহিম রানা সহ যশোরের বিভিন্ন প্রজন্মের সাংবাদিকরা একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে পারে না। দেশের সংবাদপত্র ও টেলিভিশন সাংবাদিকরা এখন নানা ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাজ করছেন। তাই সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সময়ের দাবি।
মানববন্ধনে যশোর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার প্রতিনিধিসহ নারী সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই একযোগে বলেন, “আমরা ন্যায়বিচার চাই, ভয়মুক্তভাবে কাজ করার অধিকার চাই।”
মানববন্ধন শেষে সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের নেতারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বৃহত্তর সাংবাদিক আন্দোলনের অংশ হবে যশোরের সাংবাদিক সমাজ।





