সাকিব খান, শ্রীপুর প্রতিনিধি :
মাগুরার শ্রীপুরে কুমার নদীতে একটি মাত্র ব্রিজের অভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ২০ টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। নদ পারাপারের একমাত্র ভরসা ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে একটি ব্রিজের দাবি জানিয়ে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দফতরে ধর্না দিয়েও কোন লাভ হয়নি। কুমার নদের উত্তর পাশের বড়তলা, গয়েশপুর, আলফাপুর, সাবিনগর, জোকা,বাগবাড়িয়া, চন্ডিখালীসহ অন্তত ৭ টি গ্রামের মানুষকে নিত্যদিন কৃষিপণ্য বিপণন, চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয় দক্ষিন দিকের হাট শ্রীকোল গ্রামে। উত্তর দিকের হাট শ্রীকোল, সরইনগর, খোর্দ্দরহুয়া, দরিবিলা, দাইরপোল, রামনগর, বারইপাড়াসহ ১৩ টি গ্রামের মানুষকে লাঙ্গলবাঁধ বাজারে কৃষিপণ্য বিপনন ও নানা কাজে যাতায়াত করতে হয় নদের অপর দিকের গ্রামগুলোতে।
প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় কোন রকমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন তারা। শত বছরের খেয়া ঘাট দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও সুনজর পড়েনি এলজিইডি কর্তৃপক্ষের। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ব্রিজ নির্মাণের। ব্রিজটি নির্মিত হলে শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনেতিক উন্নয়ন ও লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ কমবে বলে জানান স্থানীয়রা।
তবে আশার কথা হল, গত ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার ব্রিজ এলাকা পরিদর্শন করেন এলজিইডির গভার্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট সদর দপ্তরের প্রকল্প পরিচালক এবাদত আলী। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আ ন ম ওয়াহিদুজ্জামান, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী প্রসেনজিৎ চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি আলমগীর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই মণ্ডল, শ্রীকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ মোল্যা, শ্রীকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বিএনপি নেতা মো. আসাদুজ্জামান খাজা বিশ্বাস, শ্রীকোল বাজার কমিটির সভাপতি রেজাউল কবির, শ্রীকোল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসমিন বিশ্বাসসহ উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ও মাগুরা জেলা সদস্য বদরুল আলম হিরো সাধারণ সম্পাদক মুন্সি রেজাউল করিম ও খন্ডকার আব্বাস উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ সময় এলাকার শত শত স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও নারী-পুরুষ উপস্থিত হয়ে দ্রুত ব্রিজটি বাস্তবায়নের দাবি তোলেন।
গয়েশপুর ও বড়তলা গ্রামের শ্রীকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম ও জুঁই খাতুন জানান, আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুমার নদ পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে যখন নদীর পানি বেড়ে যায় তখন নদী পার হতে খুব ভয় লাগে। নদ পারাপারের জন্য অনেক সময় আমরা সময় মত স্কুলে যেতে পারি না। অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও স্কুলে যাওয়া হয়না। দ্রুত এখানে একটি ব্রিজের দাবি আমাদের।
স্থানীয় কৃষক হোসেন আলী জানান, কৃষিপণ্য সরবরাহারের জন্য আমাদের নদ পার হতে হয়। অনেক সময় ঘাট দিয়ে ছোট নৌকায় কৃষিপণ্য পার করা সম্ভব হয়না। তখন আমাদের শ্রীপুর না হয় হাট ফাজিলপুর ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তাতে খরচও বেশি হয়। বেশি ভোগান্তিতে পড়ে কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
শ্রীকোল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসমিন বিশ্বাস জানান, এখানে একটি ব্রিজ হলে শ্রীকোল বাজার অনেক উন্নত হবে। বাজার ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। সব কিছু মিলে নদের দুই পাড়ের ২০ টি গ্রামের মানুষ স্বস্তি পাবে।
এলাকাবাসী জানান, আশেপাশের অন্তত ২০ টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের এই নদে পারাপারের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে কমলমতি স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও কৃষকদের খুব ঝামেলা পোহাতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয়। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের দাবি এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের। নদে ছোট নৌকা পারাপারে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা এমনটাই আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
শ্রীকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ মোল্যা বলেন, খুব দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ প্রয়োজন। এখানে ব্রিজ নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। শিক্ষার মান উন্নত হবে। সেই সাথে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়বে। এলজিডি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী জানান, কুমার নদের ওই এলাকায় ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্রিজ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।





