আব্দুর রহিম রানা, যশোর :
যশোরে যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানার তৈরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বুধবার রাতে প্রিন্টিং প্রেস থেকে দুইজনকে আটক করার পর বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) কোতোয়ালি থানায় স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট-এর ধারায় মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাসির উদ্দিন।
আটক নাহিদ বিল্লাহ ও দেবু প্রসাদ মল্লিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন—যশোর সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপুল, সাবেক কাউন্সিলর হাজী সুমন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান মুন্না, রাজু আহমেদ, হিটার নয়ন এবং মাহমুদ হাসান লাইফ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের কাছে খবর আসে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও আইসিটি আইন বন্ধের দাবিতে যুবলীগের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হচ্ছে। এই কর্মসূচির ব্যানার তৈরির কাজ চলছিল যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের “আই.এন.বি ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রেসে।” নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল।
খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। সেখানে ব্যানার তৈরির কাজ চলতে দেখা যায়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে নাহিদ বিল্লাহ ও দেবু প্রসাদ মল্লিককে আটক করে। অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদে দেবু প্রসাদ মল্লিক স্বীকার করেন যে, তিনি আনোয়ার হোসেন বিপুলের নির্দেশে ব্যানার তৈরিতে অংশ নেন। নাহিদ বিল্লাহও একই স্বীকারোক্তি দেন।
পরে পুলিশ ব্যানারটি জব্দ করে এবং প্রিন্টিং প্রেসে থাকা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক বিশ্লেষণ করে দেখে, এর আগেও ওই প্রতিষ্ঠানে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচির ব্যানার প্রিন্ট করা হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এমন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছিল, যা আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী বাবুল বলেন, “ঘটনার পর দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। ব্যানারের বিষয়বস্তু ও প্রিন্টিং প্রেসের কার্যক্রম নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান চলছে।”
অন্যদিকে, স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে ঘিরে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি ক্ষমতাসীন দলের ভেতরের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ, আবার কেউ দাবি করছেন, প্রশাসন অতিরিক্ত তৎপর হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অপরাধের পর্যায়ে টেনে নিচ্ছে।
যুবলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যুবলীগের ব্যানারে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য ছিল না, বরং দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু বিষয়টি অতিরঞ্জিতভাবে দেখা হয়েছে।”
স্থানীয় নাগরিক সমাজের একাংশ মনে করছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপে অবস্থানগত দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে এই ব্যানার উদ্ধারের ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি কেবল একটি ব্যানার তৈরির বিষয় নয়—এর পেছনে দলের অভ্যন্তরীণ শক্তির লড়াই ও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে।”
মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন। তবে ঘটনাটি যেভাবে স্থানীয় রাজনীতিকে আলোড়িত করেছে, তাতে এটি শুধুমাত্র একটি আইনগত মামলা নয়, বরং যশোরের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা বলে মনে করছেন অনেকেই।




