শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, কিন্তু গাজায় আবারও ইসরায়েলি হামলা: নিহত দুই, শান্তি ঝুঁকির মুখে

যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর রাখার ঘোষণা দিলেও গাজায় নতুন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সর্বশেষ এই হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতের হামলায় নিহত হন শতাধিক মানুষ, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।

এমন পরিস্থিতিতে শান্তি প্রচেষ্টাকে “হাতছাড়া না করতে” সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ত্রবিরতি পুনরায় কার্যকর রাখার দাবি জানিয়ে হলেও নতুন করে গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার সন্ধ্যায় উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় চালানো ওই হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন বলে আল-শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হামলা চালিয়েছে এমন স্থানে যেখানে অস্ত্র মজুত ছিল এবং সেগুলো তাদের সেনাদের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি তৈরি করছিল।

এই হামলা গাজার নাজুক অস্ত্রবিরতিকে নতুন করে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু “প্রতিশোধমূলক জোরালো হামলার” নির্দেশ দেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ওই হামলায় ১০৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইসরায়েল জানায়, তারা হামাসের সিনিয়র যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে এই অভিযান চালিয়েছে এবং “ডজনখানেক” যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এরপর বুধবার দুপুরে তারা আবারও অস্ত্রবিরতি কার্যকর রাখার ঘোষণা দেয়। কিন্তু একইদিন সন্ধ্যায় আবারও হামলা চালায় তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, সর্বশেষ হামলা সত্ত্বেও অস্ত্রবিরতি “ঝুঁকির মুখে নেই”। অন্যদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এই হামলায় হতাশা প্রকাশ করেছে, তবে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, গুতেরেস গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এই হামলায় বহু শিশুও নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক বলেন, এত বিপুল সংখ্যক হতাহতের খবর “ভয়াবহ”। শান্তি যেন “হাতছাড়া না হয়”, সে বিষয়ে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একই আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও।

হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফাহে যে ঘটনায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন, সেটার সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের “কোনও সম্পর্ক নেই”। তারা অস্ত্রবিরতি মানার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে সাম্প্রতিক হামলার কারণে এক মৃত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের নতুন হামলা চলতে থাকলে এটি “বন্দিদের মরদেহ উদ্ধার অভিযানে বাধা সৃষ্টি করবে।” অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ রেডক্রসের প্রতিনিধিদের ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারা দাবি করছে, এমন সাক্ষাৎ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

হামাস এই নিষেধাজ্ঞাকে বন্দিদের অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধ চলাকালে কার্যত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎই ছিল এবং এটি “ইসরায়েলের ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও অনাহারে রাখার নীতির অংশ।”

শেয়ার করুন