জেমস আব্দুর রহিম রানা, ( যশোর 🙂
যশোর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর বিরুদ্ধে ফের দেড় কোটি টাকার চেক ডিজঅনারের আরও দুটি মামলা হয়েছে। এর আগে মাত্র ১৩ দিন আগে একই ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ৯০ লাখ টাকার দুটি চেক ডিজঅনার মামলার পর এবার নতুন করে আরও দেড় কোটি টাকার দুই মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফলে গত দুই সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা সংক্রান্ত মোট চারটি মামলা হলো।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)-এর পক্ষে যশোর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মুর্তুজা আহম্মেদ এ দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো আমলে নিয়ে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু কুমার মণ্ডল আসামি তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর বিরুদ্ধে সমন জারি করে আগামী ২৫ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু শহরের পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা এলাকার আব্দুল কাদের চাকলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন বলে জানা যায়। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একসময় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এই সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমানে নানা আর্থিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ইউসিবি ব্যাংকের মাধ্যমে এক কোটি টাকার বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে আসল ও লভ্যাংশসহ টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধ না করায় বর্তমানে ব্যাংকের কাছে তার এক কোটি ২৯ লাখ ৬১ হাজার ৪৪ টাকা বকেয়া রয়েছে।
২০ আগস্ট বাদী মুর্তুজা আহম্মেদ পাওনা টাকা চেয়ে ফন্টুর সঙ্গে দেখা করেন। তখন ফন্টু এক কোটি টাকার একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু সেটি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর তা ডিজঅনার হয়। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেও ৩০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
দ্বিতীয় মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, একই ব্যাংক থেকে ফন্টু ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট সেই অর্থ পরিশোধের কথা থাকলেও তা পরিশোধ করেননি। বর্তমানে তার কাছে ওই হিসাবে ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ১৭২ টাকা পাওনা রয়েছে। ২১ আগস্ট ফন্টুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাওনা টাকা দাবি করা হলে তিনি ৫০ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন, যা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরও বাউন্স হয়। এরপর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলেও নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় বাদী আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক উভয় মামলার অভিযোগই গ্রহণ করেছেন এবং পৃথকভাবে সমন জারি করেছেন। ফন্টুকে আগামী ২৫ মার্চ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৬ অক্টোবর ইউসিবি ব্যাংকের পক্ষ থেকে তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর বিরুদ্ধে ৯০ লাখ টাকার দুটি চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে নতুন আরও দেড় কোটি টাকার দুটি মামলা দায়েরের ঘটনায় যশোর রাজনৈতিক অঙ্গনসহ ব্যবসায়ী মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফন্টুর বিরুদ্ধে এর আগেও ব্যবসায়িক ও আর্থিক অনিয়মের নানা অভিযোগ ওঠে, তবে সেগুলো কখনো আইনি প্রক্রিয়ায় গড়ায়নি। এবার পরপর চারটি মামলা দায়ের হওয়ায় বিষয়টি আদালত ও প্রশাসনের নজরে এসেছে।
যশোরের রাজনৈতিক মহলে কেউ কেউ বলছেন, ব্যবসায়িক দুর্বলতা ও ব্যর্থ ব্যবস্থাপনার কারণে ফন্টু এই অবস্থায় পড়েছেন, অন্যদিকে অন্য একটি অংশের দাবি—তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন চেষ্টা করেছি যেন বিষয়টি আদালতে না যায়। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
এদিকে, সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চেক ডিজঅনারের একের পর এক মামলা ফন্টুর ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনায় রাজনীতিকদের দায়বদ্ধতা এবং আর্থিক সততা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হবে।
সব মিলিয়ে যশোরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর বিরুদ্ধে একের পর এক চেক ডিজঅনার মামলা ঘিরে এখন তীব্র আলোচনার ঝড় বইছে—যা শুধু আদালতের প্রাঙ্গণেই নয়, রাজনীতির অন্দরমহল থেকেও জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।





