মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মণিরামপুরে গৃহবধূ শিল্পী মল্লিকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন

আব্দুর রহিম রানা, যশোর প্রতিনিাধ : 
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের হরিণা গ্রামে গৃহবধূ শিল্পী মল্লিকের মৃত্যুকে ঘিরে এলাকায় নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারের দাবি—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার সাড়া পোল রূপদিয়া গ্রামের অনন্ত মল্লিকের মেয়ে শিল্পী মল্লিকের সঙ্গে হরিণা গ্রামের মাধব কুমার রায়ের ছেলে রনি রায়ের বিয়ে হয় সাড়ে চার বছর আগে। বিয়ের শুরুতে সংসার ভালোই চলছিল। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক পুত্রসন্তানের জন্মও হয়। কিন্তু সন্তানের জন্মের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ বাড়তে থাকে।
শিল্পীর মা নিলিমা মল্লিক অভিযোগ করে বলেন, “বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই রনি আমার মেয়ের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও দিত না ওরা। ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে নানা অজুহাতে বাধা দিত রনির পরিবার।”
শিল্পীর ভাই মহিত মল্লিক বলেন, “আমার বোনের ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নিয়মিত মারধর করত রনি। ঘটনার আগের দিনও বেধড়ক মারধর করে। বোনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে, গলায় নখের দাগও দেখা গেছে। আমরা নিশ্চিত—তাকে হত্যা করে পরে ফাঁস দেওয়া হয়েছে।”
ঘটনাটি ঘটে ২ নভেম্বর রাতে রনির নিজ বাড়িতে। স্থানীয়দের মতে, রনি ও তার পরিবার মিলে বাড়ির পাশেই একটি চায়ের দোকান চালাত। সেই দোকানে প্রায়ই এলাকার বিভিন্ন বয়সী লোকজন আসত। রনির বাবা মাধব কুমার রায়ের দাবি, দোকানে আসা এক যুবকের সঙ্গে শিল্পীর অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়, যা থেকে মানসিক চাপে শিল্পী আত্মহত্যা করে।
ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় দোকানে ওই যুবক আসলে রনি তার ফোন আটকে রেখে বলে, “আমার পাওনা ১৭ শত টাকা দিয়ে ফোন নিয়ে যেও।” এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় এবং একপর্যায়ে রনি ও তার বাবা যুবকটিকে মারধর করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় টাকা পরিশোধের পর যুবকটি সেখান থেকে চলে যায়।
অন্যদিকে, ওই যুবকের মা জানান, “আমার ছেলে ইমনের সঙ্গে শিল্পীর কোনো সম্পর্ক ছিল না। রনির সঙ্গে ঝামেলার পর আমি ইমনকে একটু বকাঝকা করেছিলাম। রাগ করে সে মোবাইল ভেঙে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকে ওর কোনো খোঁজ পাইনি।”
মৃত শিল্পীর মা নিলিমা মল্লিক চোখের জল সামলাতে সামলাতে বলেন, “আমার একমাত্র মেয়েকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। যেন আর কোনো মা এভাবে সন্তান হারিয়ে কষ্ট না পায়।”
তিন বছরের এক সন্তান রেখে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন শিল্পী মল্লিক। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে মণিরামপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
স্থানীয়দের মতে, পুরো ঘটনাটিই এখন রহস্যে ঘেরা। পুলিশ তদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন শিল্পীর পরিবার ও এলাকাবাসী।
শেয়ার করুন