বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিহারের ভোট: আর্থিক বাস্তবতা বিজেপিকে এগিয়ে দিতে পারে

ভারতের দরিদ্রতম রাজ্য বিহারে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যেখানে প্রায় ১৩ কোটি মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই প্রধান প্রভাবক।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই বাস্তবতাকে কাজে লাগাতে চায়। দলটি ভোটারদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিহারে বিজেপির জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলিতেও দলের জন্য নতুন গতি সৃষ্টি করতে পারে।

বিহার ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য এবং হিন্দি ভাষাভাষী উত্তর ভারতের একমাত্র রাজ্য, যেখানে মোদির হিন্দুত্ববাদী দল এককভাবে কখনও ক্ষমতায় আসেনি।

মুজাফফরপুর জেলার গৃহবধূ রাজকুমারি দেবী জানান, তার স্বামীর দিনমজুর আয়ের ওপর সংসার চলে। দিনে ৪০০–৫০০ রুপি আয় হলেও কোনো স্থায়িত্ব নেই। বেকারত্ব ও অস্থিরতা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা।

সরকারি নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান নীতি আয়োগ অনুযায়ী, বিহারের দারিদ্র্যের হার দেশেই সর্বাধিক। রাজ্যের মাথাপিছু জিডিপি ৫২,৩৭৯ রুপি, যা মধ্য আফ্রিকার দেশের সমতুল্য। তবে শেষ এক দশকে কিছু উন্নতি হয়েছে; ২০১৬ সালে ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে’ বসবাসকারী মানুষের হার অর্ধেকের বেশি ছিল, যা ২০২১ সালে নেমে এসেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে।

গত সেপ্টেম্বরে মোদি ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিনিয়োগ প্রকল্প ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে রেল ও সড়ক উন্নয়ন, নতুন কৃষি প্রকল্প এবং একটি বিমানবন্দর টার্মিনাল নির্মাণ। এছাড়া নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ৮৪৪ মিলিয়ন ডলারের একটি কর্মসূচি চালু হয়েছে, যার আওতায় ৭৫ লাখ নারীকে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।

বর্তমানে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সঙ্গে ক্ষমতায় থাকা জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)-এর অংশ। তবে দলটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি। রোববার পাটনার এক জনসভায় মোদি ভোটারদের ‘এনডিএকে আশীর্বাদ দিন’ আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক পুষ্পেন্দ্র মনে করেন, এই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবে বিজেপি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে কি না। বিজয় বিহারের বাইরে অন্যান্য রাজ্যেও দলের জন্য নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে।

বিহারে ভোট দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে—৬ ও ১১ নভেম্বর। ফলাফল ঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর।

বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। গত সপ্তাহে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব প্রতিটি পরিবারে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনসভা করেছেন। একই সঙ্গে বিজেপির সাবেক নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর ‘জন সুরাজ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। সমর্থকরা তাকে গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে রাস্তায় অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।

২৫ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ও কিশোর সমর্থক মুদাসির বলেন, “এবার বড় জয় না পেলেও সমস্যা নেই।” বিশ্লেষক পুষ্পেন্দ্র জানান, ভোটের ফল নির্ভর করবে ভোটাররা কোন দলকে নিজেদের ভবিষ্যতের ভরসা মনে করছেন তার ওপর।

৩০ বছর বয়সি শ্রমিক বিকাশ কুমার উল্লেখ করেন, “এখানে যদি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যেত, মানুষ না খেয়ে মরত না। তারা ঘরে বসে আয় করতে পারত, নিয়মিত খাবার জুটত এবং ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারত।”

শেয়ার করুন