জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ভিন্নমতের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, একটি দল সংস্কার প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দিতে চাইছে, আরেকটি দল নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর চেষ্টা করছে।
রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে কোনো লিখিত বিবৃতি না দিয়ে সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে বক্তব্য দেন তিনি।
নাহিদ বলেন, “বিএনপি শুরু থেকেই ঐকমত্য কমিশনের মূল প্রস্তাবগুলো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে। ফলে তারা সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি কতটা আন্তরিক— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনগণের মধ্যেও, আমাদের মধ্যেও। অন্যদিকে জামায়াতের আচরণে মনে হচ্ছে তারা নির্বাচনের সময়সূচি পিছিয়ে দিতে চায়। অর্থাৎ, একপক্ষ সংস্কার বাধাগ্রস্ত করছে, আরেকপক্ষ নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়।”
তিনি আরও বলেন, “গণভোট আগে হবে নাকি নির্বাচনের দিনই হবে— এই প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এই বিতর্ক সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়।”
নাহিদ অভিযোগ করেন, উচ্চকক্ষে পিআর ব্যবস্থা এবং দুই কক্ষেই পিআর দাবি তুলে এই ইস্যুটি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার ভাষায়, “জুলাই সনদে কী কী সংস্কার থাকবে, সেগুলোর আইনি ভিত্তি কীভাবে গঠিত হবে, এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সেটি আদেশ আকারে জারি করবেন কি না— এগুলোই এখন মূল প্রশ্ন। এসব বিষয়ে ঐক্যমত্য হলে গণভোট নির্বাচনের দিনেই হতে পারে, আবার তার আগেও করা যেতে পারে— এ বিষয়ে আমরা আলোচনায় প্রস্তুত।”
নাহিদ ইসলাম স্পষ্টভাবে জানান, এনসিপি ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন চায়। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এই মাসের মধ্যেই অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে আদেশটি জারি হওয়া উচিত। যেসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জুলাই সনদ অবশ্যই অধ্যাপক ইউনূসের মাধ্যমেই জারি হতে হবে। যদি এটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে জারি হয়, তবে সেটির কোনো বৈধতা বা রাজনৈতিক ভিত্তি থাকবে না।”
রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, দ্বন্দ্ব আর বিভাজনও তত বাড়বে। তবে আওয়ামী লীগ ইস্যুতে সব দলের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। কারণ, নির্বাচনে নাশকতা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সব ধরনের অপচেষ্টা আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই আসবে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে নাহিদ বলেন, “গণহত্যা শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগই এর জন্য দায়ী।”
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন তিনি। নাহিদের মতে, “ভারত যদি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশকে দেখা বন্ধ করে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তোলা।”
এ সময় তিনি জানান, এনসিপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। কোন আসন থেকে নিজে নির্বাচন করবেন জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, “আমি ঢাকায় জন্মেছি, তাই স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার কোনো আসন থেকেই নির্বাচন করতে পারি। আমরা ৩০০ আসনের প্রস্তুতিই নিচ্ছি। এ মাসের মধ্যেই প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।”
জোট গঠনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, “যারা সংস্কারের পক্ষে থাকবে না, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে যেসব দল আমাদের মৌলিক দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাদের সঙ্গে সমঝোতা বা সমন্বয়ের বিষয়ে আমরা বিবেচনা করতে পারি।”
দলীয় প্রতীক নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবেই আমাদের প্রতীকের বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি করেছে, যাতে এনসিপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ব্যাহত হয় এবং আমরা প্রচারণা থেকে পিছিয়ে পড়ি।





