শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফুটবল ইতিহাসে বিরল দুই গোলের কীর্তি, ম্যারাডোনার নাম চিরস্মরণীয়

৬৫ বছর আগে আজকের দিনে জন্মগ্রহণকারী দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা ঠিক এমনই কীর্তি ঘটিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ওই দুই গোলই তাকে ফুটবলের চিরস্মরণীয় হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। ম্যাচের পটভূমিও নাটকীয় ছিল। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আর্জেন্টিনার অ্যাওয়ে জার্সির রঙ ছিল গাঢ় নীল। মেক্সিকোর তীব্র গরমে সেই জার্সি পরা দুষ্কর ছিল। কোচ কার্লোস বিলার্দো তখন হালকা রঙের জার্সির খোঁজ করছিলেন। তখনই ম্যারাডোনা হাতে একটি জার্সি ধরে বলেছিলেন, ‘দেখুন, এই জার্সি সুন্দর এটা পরেই আমরা ইংল্যান্ডকে হারাব।’ শেষ পর্যন্ত সেই জার্সিতেই মাঠে নেমেছিলেন তারা।

অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে কোনো গোল হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যারাডোনা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে দেন। প্রতিপক্ষের ভুলে পাওয়া বলটিকে হেডের ভান করে তিনি নিজের বাঁহাত দিয়ে জালে পাঠান। ফুটবল বিশ্ব তখন প্রথমবার দেখল ‘হ্যান্ড অফ গড’। সতীর্থরা প্রথমে গোল উদযাপন করতে এগোয়নি, এবং পরে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘উদযাপন করছেন না কেন? না হলে গোল বাতিল হয়ে যাবে!’ কিন্তু রেফারি গোলটি বৈধ ঘোষণা করেন। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে ম্যাচটি ছিল মানসিক দিক থেকেও চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ম্যারাডোনা সেখানে ফুটবলের এক অনন্য অধ্যায় লিখে যান। চার মিনিটের ব্যবধানে, তিনি ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ করে দেখান। নিজের অর্ধ থেকে একাই শুরু হওয়া দৌড়ে গ্যারি স্টিভেন্স, পিটার রেইড, টেরি বুচার, টেরি ফেনউইককে ফাঁকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষক পিটার শিলটনকেও বায়ুবিহীন স্পর্শে বল জালে পাঠান। দর্শকরা তখন উন্মাদনা দিয়ে উৎসব করে ওঠে। ইংলিশ ফরোয়ার্ড গ্যারি লিনেকার পরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘তিনি ট্যাকল দিচ্ছেন, অথচ বল যেন আমার পায়ের নিচ দিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে—এটি সত্যিই বিস্ময়কর ছিল। সেদিন যে গোলটি দেখলাম, মনে হয়েছিল একটি হাতের তালি দিই; কিন্তু করি নাই, না হলে বাড়িতে গিয়ে মার খেতাম।’

সেখানে চার মিনিটের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া দুটি গোল কেবল ম্যাচের ফল পরিবর্তন করেনি, পুরো ফুটবল ইতিহাসকেই রঙিন করে দিয়েছে। একদিকে বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অফ গড’, অন্যদিকে নিখুঁত ফুটবল কৌশল ও দৃঢ়তার ‘শতাব্দীর গোল’। এই দুই ঘটনার মাঝখানে দিয়েগো ম্যারাডোনা চিরস্মরণীয় হয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতায়।

শেয়ার করুন