দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার অপরিহার্য বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি। তাদের মতে, শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বাজেটের অভাব, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গীকারের ঘাটতি, জবাবদিহিতার অভাব এবং জনসচেতনতার কম থাকায় শিক্ষার গুণগত মানে মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন। এই রূপান্তর আনতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া একটি সামগ্রিক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় রাজধানীর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে আয়োজিত গোলটেবিল সভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরজাহান খাতুন, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির মহাপরিচালক জুলফিকার হায়দার, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য এবাদুল হক, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহল, ইনস্কোর এবং অন্যান্য প্রতিনিধিরা।
সভায় বক্তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার এবং মান দুই ক্ষেত্রেই সমস্যা রয়েছে। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার ১৩.৯৫ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩২.৮৫ শতাংশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট ২০২২ অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৫০% বাংলা সঠিকভাবে পড়তে পারছে না এবং মাত্র ৩০% শিক্ষার্থী গণিতে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেন, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে বরাদ্দ মাত্র ১.৮% জিডিপি, যেখানে ন্যূনতম ৫% হওয়া প্রয়োজন। বক্তারা বলেন, “যেখানে বিনিয়োগ কম, সেখানে মানের ঘাটতি দেখা যায়। শিক্ষা হলো ভবিষ্যতের বিনিয়োগ, ব্যয় নয়।”
বক্তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গীকারের অভাবকেই শিক্ষার বড় ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে দেখেন। “আমরা শিক্ষক, মিডিয়া, অভিভাবক সবাইকে দায়ী করি, কিন্তু দিকনির্দেশনা দেয় মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্ব। দেশে ১৭ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে—যা বৈষম্য তৈরি করে এবং শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে।”
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পারফরম্যান্স-ভিত্তিক মূল্যায়ন এবং জবাবদিহিতার অভাব শিক্ষার মান কমানোর আরেকটি বড় কারণ। বক্তারা বলেন, শিক্ষকের আত্মপ্রেরণা থাকলে তারা দায়িত্বশীলভাবে পাঠদান করেন; না থাকলে শুধু বেতন পেলে কাজ শেষ মনে করেন।
শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তাদের মূল প্রস্তাবনা:
শিক্ষকদের জন্য আলাদা কমিশন গঠন, যাতে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন মানসম্মত হয়।, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সামাজিক চুক্তি তৈরি করা।, শিক্ষা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ এবং মানসম্মত স্কুল প্রতিষ্ঠা।, টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা সম্প্রসারণ।, শিক্ষকদের যোগ্যতা, সম্মান ও প্রণোদনা বৃদ্ধি।, আসন্ন নির্বাচনের দলীয় ইশতেহারে শিক্ষা খাতের অগ্রাধিকার অন্তর্ভুক্তি।
বক্তারা পুনর্ব্যক্ত করেন, এই ধরণের উদ্যোগ ছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষা খাতকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব নয়।




