রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পদ্মায় ‘হারানো অতিথি’ ফের দেখা মিললো বিলুপ্ত ঘোষিত মিঠাপানির কুমিরের

অপু দাস, রাজশাহী প্রতিনিধি :
রাজশাহীর পদ্মা নদীতে একাধিক কুমিরের দেখা মিলেছে—এর মধ্যে একটি প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের ছবি তুলেছেন স্থানীয় আলোকচিত্রী দম্পতি ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা। ছোট কুমিরও দেখেছেন স্থানীয় জেলেরা। ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, যারা ইতোমধ্যে এলাকাবাসীকে মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দিয়েছে নদীতে গোসল বা নৌকা চালনা না করার বিষয়ে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ষাটবিঘা চরে পাখির ছবি তুলতে গিয়ে কায়েস দম্পতি কুমিরটির দেখা পান। তাদের ড্রোনে ধারণ করা ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, বিশালাকৃতির কুমিরটি পানির ধারে নিশ্চিন্তে রোদ পোহাচ্ছে। স্থানীয় রাজু আহাম্মেদ প্রথম প্রাণীটি দেখেছিলেন গরু চরাতে গিয়ে।
আইইউসিএন (IUCN) জানায়, ছবিতে দেখা প্রাণীটি আসলে মিঠাপানির কুমির (Freshwater Crocodile) — যাকে বাংলাদেশে ২০১৫ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, “২০১৫ সালে মিঠাপানির কুমির বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও পরে পাবনা ও আরও দুটি স্থানে কিছু কুমির পাওয়া গিয়েছিল, যেগুলো এখন সুন্দরবনের করমজল প্রজননকেন্দ্রে রয়েছে।” তিনি ধারণা করছেন, রাজশাহীতে দেখা পাওয়া কুমিরটি সম্ভবত ভারতের চাম্বুল নদী এলাকা থেকে ভেসে এসেছে। রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, স্থানীয় জেলেরা ছোট কুমিরও দেখেছেন, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে পদ্মায় একাধিক কুমির থাকতে পারে। তিনি বলেন, “এগুলো জলজ প্রাণী, তাদের স্বাভাবিক পরিবেশেই থাকতে দিন—বিরক্ত করা যাবে না।”
অন্যদিকে, স্থানীয়দের কেউ কেউ কুমিরটি ধরার দাবি তুলেছেন। তবে আলোকচিত্রী ইমরুল কায়েসের মত, “কুমিরটি যেন মুক্ত অবস্থায় নদীতেই থাকে। এটি যদি এখানেই প্রজনন করতে পারে, তবে এটি হবে বাংলাদেশের জন্য বড় পরিবেশগত পুনর্জন্মের নিদর্শন।” বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের লিফলেটে বলা হয়েছে, “কুমির হিংস্র হলেও তারা জলজ বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কুমির দেখলে বিরক্ত না করা, নদীতে গোসল না করা, শিশুদের নদীর ধারে না পাঠানো, ছোট নৌকা চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা এবং রোদ পোহানো কুমিরের দিকে ঢিল না ছোড়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
এছাড়া লিফলেটে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী সতর্ক করা হয়েছে যে, কুমিরকে ধরা, হত্যা করা বা বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ—যার শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ড। রাজশাহীর পদ্মার বুকে বিলুপ্ত বলে মনে করা এই কুমিরের পুনরাবির্ভাব স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে এখন এক দুর্লভ পরিবেশ বার্তা—যা হয়তো জানিয়ে দিচ্ছে, প্রকৃতি এখনো তার হারানো সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে জানে।
শেয়ার করুন