রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নভেম্বরে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আজ স্মারকলিপি দেবে জামায়াতসহ ৮ দল

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, নভেম্বরে গণভোট ও ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করতে চায় জামায়াতে ইসলামীসহ মতাদর্শে কাছাকাছি আটটি দল। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেবে তারা। ৩ নভেম্বর শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠক শেষে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একই সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রধান। তাই বর্তমান রাজনীতিতে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা দূর করতে তাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি এবং নভেম্বরে গণভোটের ঘোষণা দিতে হবে। আমরা কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আগামী নির্বাচন সেটিরই একটি প্রক্রিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউনুছ আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ এখন এক রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের ইচ্ছা ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার দায়িত্ব নিয়ে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার প্রতিরোধের কাজ শুরু করে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে। দীর্ঘ আলোচনায় ৮৪টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। তবে কয়েকটি দলের ভিন্নমতের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দিয়েছেন। কমিশন সরকারকে তিনভাবে তা বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন ছাড়া যেসব বিষয় বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সরকার সেগুলো অধ্যাদেশ জারি করে করতে পারে। জুলাই সনদ ও সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ে সরকারের আদেশ জারির পর জনগণের মতামত নেওয়ার জন্য গণভোট করতে হবে। গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ আইনগত ভিত্তি পাবে না। সবাই গণভোটের বিষয়ে একমত। আমাদের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট সম্পন্ন করতে হবে।

ইউনুছ আহমাদ আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়মুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল রোধ, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের অনিয়ম বন্ধ, গুণগত মানের সংসদ ও দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরির জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন পেশার মানুষ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপদেষ্টা পরিষদ ইতিমধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা দেখছি, একটি রাজনৈতিক দল গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কিছু বিষয় পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। তাদের এই দাবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে বা উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমতাভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির, জাগপা সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র এবং ডেভলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন