সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুধের ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষোভে উত্তাল খামারিরা মিল্কভিটায় দুধ সরবরাহ বন্ধ

জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড (মিল্কভিটা) কর্তৃপক্ষের প্রতি লিটার দুধের দাম ১০ টাকা বৃদ্ধিসহ ছয় দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জে খামারিরা দুধ সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা করেছেন। রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি দুগ্ধ কারখানায় দুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেন সমবায়ীরা।
রেশমবাড়ী দুধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি এনামুল হক জানান, “গত ২৫ অক্টোবর মিল্কভিটার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় আমরা প্রতি লিটার দুধে ১০ টাকা বৃদ্ধির দাবি জানাই। ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় আজ থেকে দুধ সরবরাহ বন্ধ রেখেছি।”
তিনি আরও বলেন, “গোখাদ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে। দুধ উৎপাদনে খরচ প্রতিনিয়ত বাড়লেও মিল্কভিটা এখনো আগের দামেই দুধ নিচ্ছে। আমরা একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন করেছি, কিন্তু মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং আমাদের ওপর নানা হুমকি-ধমকি চলছে।”
সমবায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু দুধের দাম বৃদ্ধিই নয়—মিল্কভিটার দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অপসারণ, নির্বাচন দিয়ে নতুন কমিটি গঠন, খামারিদের শেয়ার সার্টিফিকেট প্রদান এবং চিকিৎসা ও জাত উন্নয়ন তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাসহ ছয় দফা দাবি তোলা হয়েছে।
বর্তমানে মিল্কভিটা প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে প্রতি লিটার দুধ কিনছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, অথচ একই দুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এতে খামারিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে, দুধের দাম থেকে প্রতি লিটারে ৬০ পয়সা করে গবাদিপশুর চিকিৎসা ও জাত উন্নয়ন বাবদ এবং আরও ৪০ পয়সা করে শেয়ার বাবদ কেটে রাখলেও খামারিরা সেই সুবিধা পান না। কোনো শেয়ার সার্টিফিকেটও দেওয়া হচ্ছে না।
এনামুল হক বলেন, “আমাদের কষ্টার্জিত দুধের ন্যায্য দাম পাই না, অথচ মিল্কভিটার কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে নিজেদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এতে প্রান্তিক খামারিরা আরও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।”
সিরাজগঞ্জ-পাবনা মিল্কশেড এলাকায় বর্তমানে প্রায় পাঁচশত খামারে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে মিল্কভিটা মাত্র ২০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করছে। বাকি দুধ স্থানীয় ঘোষদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা।
স্থানীয়রা বলছেন, মিল্কভিটার প্রতি লিটার দুধের দাম বৃদ্ধির এই দাবি কেবল খামারিদের নয়, এটি টিকে থাকার লড়াই। সরকারের হস্তক্ষেপ না হলে দেশের প্রাচীনতম এই দুগ্ধ সমবায় ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে প্রান্তিক খামারিরা।
শেয়ার করুন