ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সোমবার নতুন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এতে আগের অনুচ্ছেদগুলিতে একগুচ্ছ পরিবর্তনের সঙ্গে কিছু নতুন বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এই সংশোধিত আরপিওর ভিত্তিতে শিগগিরই দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি চূড়ান্ত করবে। নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, আদালতের দ্বারা ফেরারি হিসেবে ঘোষিত প্রার্থী এবার ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। পাশাপাশি দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী পুনঃসংযোজন করা হয়েছে এবং একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের বিধান চালু করা হয়েছে।
আরপিওতে বলা হয়েছে—সমভোট হলে পুনঃভোট হবে, জোটে অংশ নিলে ভোট অবশ্যই নিজের দলের মার্কায় দিতে হবে, জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু, অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধান, এআই অপব্যবহার নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য, এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য পেলে ভোটের পরও ইসি ব্যবস্থা নেবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় এবার সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে রাখা হয়েছে, এবং তাদের তালিকা কমিশনের অনুমোদনের মাধ্যমে কার্যকর হবে। রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটকর্মীকে বরখাস্ত করলে তা কমিশনকে জানাতে হবে।
আরপিওতে বলা হয়েছে—প্রার্থী হতে চাইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা অন্যান্য কার্যনির্বাহী পদে থাকা যাবে না। ‘লাভজনক’ পদে থাকা প্রার্থীও ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। হলফনামায় দেশের এবং বিদেশের আয়ের উৎস বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে। অসত্য তথ্য প্রমাণিত হলে নির্বাচনের পরও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা ইসিকে থাকবে।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রার্থী বা ব্যাংক পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সেবাদানকারী সংস্থা আপিল করতে পারবে। একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের বিধান চালু হয়েছে। জোটে থাকা প্রার্থী অবশ্যই নিজ দলের মার্কায় ভোট পাবে। নির্বাচনি এজেন্টকে অবশ্যই সেই নির্বাচনি এলাকার ভোটার হতে হবে।
প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, ভোট বিঘ্নিত হলে তা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল এবং আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু হয়েছে। প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী বা কারাগারে থাকা ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও গণনার সময় উপস্থিত থাকার বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সমভোট হলে লটারি না করে পুনঃভোটের ব্যবস্থা করা হবে। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ব্যয় সীমিত করা হয়েছে এবং অনুদান খোলাখুলি প্রকাশ করতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের পদান্তর তথ্য ইসিকে জানাতে হবে।
মিথ্যা তথ্য, গুজব ও এআই অপব্যবহার নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলেও জরিমানা আরোপ করা যাবে।
আরপিও সংশোধনের ফলে ভোটার তালিকা, নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটকেন্দ্র নীতি, পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা—সব ধরনের আইন ও বিধি সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। এর ভিত্তিতে শিগগিরই নির্বাচন কমিশন দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি জারি করবে।
								
															




