নির্বাচন আগে নাকি গণভোট—এ নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যেই জুলাই সনদে বিএনপির সই প্রসঙ্গে ফের বিতর্ক তৈরি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী। তাঁর মন্তব্য, বিএনপি এখন ‘না’ বলার অবস্থানে নেই; কারণ তারা ইতিমধ্যে সনদে সই করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি তুলনা টানেন কাবিননামায় সই করা এক বিবাহের সঙ্গে—“বিএনপি অনলাইনে ‘না’ বলছে, অথচ তারা ইতিমধ্যে কাবিননামায় সই করেছে। বিবাহে রাজি হওয়ার পর আর না বলার সুযোগ থাকে না,”—এমন মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনায় নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপির উচিত ছিল সনদে সই করার আগে ভালোভাবে বিবেচনা করা। তাঁর মতে, এখন তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।
জামায়াত ইসলামীকে নিয়েও সমালোচনায় যান তিনি। বলেন, দলটি মুখে একরকম, অন্তরে আরেক। “আপার হাউজের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিচের হাউজে টেনে এনে পুরো প্রক্রিয়াটাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে,”—মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমন আচরণে জামায়াতের দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয়েছে।
গণভোট ইস্যুতেও ইঙ্গিত দেন নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী। তাঁর ধারণা, শেষ পর্যন্ত জামায়াত বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করেই গণভোটে একমত হবে, হয়তো বলবে—“ইলেকশনের দিনেই গণভোট হোক।”
সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে তিনি বলেন, বল এখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোর্টে। তবে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় তিনি যোগ করেন, ইউনূস আন্তর্জাতিক মঞ্চের খেলোয়াড় হলেও বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ অনেক পিচ্ছিল, যেখানে অনেকে পিছলে যান। সেই প্রসঙ্গে তিনি নাম নেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের—যিনি এই প্রক্রিয়ায় ‘অতিরিক্ত তেল মর্দন’ করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এনসিপি নেতা মনে করেন, আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে তৈরি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন খসড়া জনসম্মুখে প্রকাশ না করলে সন্দেহ থেকেই যাবে। “খসড়াটি প্রকাশ করতে হবে, যাতে জাতি বুঝতে পারে এর ভেতরে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য লুকিয়ে নেই,”—এমন অবস্থান থেকেই তিনি স্পষ্ট করে বলেন, খসড়া না দেখা পর্যন্ত এনসিপি সই করবে না।
এক দিন আগেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে না। তাঁর ব্যাখ্যা—“আমরা শুরু থেকেই বলেছি, আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো সনদে সই করা সম্ভব নয়।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ার পর এনসিপি তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করছে বলেও জানান তিনি। প্রতিবেদনে দুটি পৃথক বাস্তবায়ন রূপরেখা—একটি সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কারের জন্য এবং অন্যটি সংবিধান-বহির্ভূত সংস্কারের জন্য প্রজ্ঞাপন আকারে উল্লেখ আছে বলেও উল্লেখ করেন নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী।
সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আসিফ নজরুল একসময় প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন। এখন বল তাঁর কোর্টে—দেখা যাক, তিনি কেমন খেলেন।
শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান জানান, উপদেষ্টাদের নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিতে। সেই অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার ও আহতদের উপস্থিত রাখারও দাবি জানান তিনি।





