জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়ার পর বিএনপি জানিয়েছে, এতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতের প্রতিফলন বেশি দেখা যাচ্ছে। বিএনপির অভিমত, সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধানত এই দুই দলের চাওয়া বাস্তবায়ন করছে, অথচ সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও বিএনপির মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
বিএনপি জানিয়েছে, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও তা সুপারিশমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় দলটি বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আগামী সংসদ প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে। এই সময়ের মধ্যে গণভোটে পাশ হওয়া প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যদি ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না হয়, তবে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা এই প্রক্রিয়াকে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দ্বারা জারি করা ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও)’ এবং আইয়ুব খান প্রবর্তিত ‘মৌলিক গণতন্ত্র’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁদের মতে, কমিশনের সুপারিশে দুটি দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তাভাবনা জাতীয় স্বার্থের নামে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ বলেন, এটি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। কমিশনের প্রস্তাব কার্যত ঐক্য না সৃষ্টি করে অনৈক্য সৃষ্টি করছে। বিএনপি মনে করছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও কিছু রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। এটি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে না করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, বলেন, “১৭ অক্টোবর দেশের ২৫টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালায় তা প্রতিফলিত হয়নি। আমরা মনে করি, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করাই মূল উদ্দেশ্য।”
অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জুলাই সনদে রেফারির ধারণা আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি। এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ।”
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “বিএনপি একটি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। অথচ আমাদের প্রস্তাবনা সুপারিশে রাখা হয়নি, বরং বিএনপি যা চায়নি তা রাখা হয়েছে। কমিশন এখন কার্যত ‘অনৈক্য কমিশন’ হয়ে গেছে। যদি সবকিছু তাদের ইচ্ছামতো হয়, তাহলে বিএনপিকে বৈঠকেই ডাকার দরকার ছিল না। সেখানে কোনো ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে না।”





