রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডে ক্ষমা চাইবেন না শেখ হাসিনা

গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হলেও এসব ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত অবস্থায় দেওয়া একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা নিজের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো একটি ক্যাঙ্গারু কোর্টে পরিচালিত হচ্ছে। আমাকে অপরাধী বানানোর সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে।” মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে তিনি তাতে “অবাক বা ভীত হবেন না” বলেও উল্লেখ করেন।

তার অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন না করে দেশের লাখো ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দলটিকে যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে লাখ লাখ সমর্থক ভোট বর্জন করবে। দলকে বাদ দিয়ে হওয়া কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই গঠিত হোক না কেন, সেই সরকারের আমলে তিনি দেশে ফিরবেন না বলেও জানান।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম প্রকাশ্য সাক্ষাৎকার। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আবারও দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে ভূমিকা রাখবে—সেটা সরকারে হোক বা বিরোধী দলে। তবে এখানে আমার পরিবারের নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়। আমরা চাই সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক।”

জাতিসংঘের স্বাধীন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ নিহত হন এবং আরও কয়েক হাজার আহত হন। বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটররা শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছেন। আগামী ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করবে ট্রাইব্যুনাল।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর সঙ্গে আলাপে শেখ হাসিনা নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান। তার বক্তব্য, “সরকারবিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ায় প্রাণহানি ঘটেছে। একজন নেতা হিসেবে আমি রাজনৈতিক দায় নিচ্ছি, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম—এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

শেয়ার করুন