বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চাঞ্চল্যকর আমিরুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন : গ্রেফতার-৩

জলিলুর রহমান, সিরাজগঞ্জ  প্রতিনিধি :
৫ নভেম্বর ২০২৫ সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা এলাকায় অটো মিশুকচালক আমিরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। নিখোঁজের তিন সপ্তাহ পর যখন তার লাশ ডোবার কচুরিপানার নিচ থেকে উদ্ধার হয়, তখন পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। অবশেষে পুলিশি তৎপরতায় উন্মোচিত হলো এ নির্মম হত্যার রহস্য। হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ; উদ্ধার হয়েছে নিহতের অটো মিশুক গাড়ির মালামালও।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত আমিরুল ইসলাম (২০) সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার অলিদহ গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। ৫ আগস্ট দুপুরে প্রতিদিনের মতো নিজ বাড়ি থেকে মিশুক নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাতে আর ফিরে আসেননি। পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে সলঙ্গা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন।
এর প্রায় দেড় মাস পর, ১৮ অক্টোবর বিকেলে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চক নিহাল উত্তরপাড়া গ্রামের একটি ডোবার কচুরিপানার নিচে একটি অজ্ঞাত লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নিহতের মা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের কাপড় দেখে লাশটি আমিরুলের বলে শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে ঘটনাটি অপহরণ ও হত্যার মামলা হিসেবে রুজু হয়।
ঘটনার পরপরই সিরাজগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটনের নির্দেশ দেন। তাঁর দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্‌) মোঃ হাফিজুর রহমান, রায়গঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম খান এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি মোঃ একরামুল হোসাইন, পিপিএম-এর নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করা হয়।
টিমের সদস্য এসআই (নিঃ) নাজমুল হক, বিপিএম, এএসআই আব্দুল জলিল প্রামানিক, আরিফুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম প্রযুক্তিনির্ভর অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা তৎপরতায় হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে শনাক্ত করে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো— মোঃ সাহেব আলী প্রামানিক (২৫), চক নিহাল, সলঙ্গা
মোঃ আব্দুল আজিম প্রাং (৩১), ওয়াসিন, তাড়াশ
(৩০) মোঃ মনিরুজ্জামান সরকার (৪৪), চক নিহাল, সলঙ্গা
তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভিকটিমের লুন্ঠিত অটো মিশুকের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করা হয়েছে— যেমন হ্যান্ডেল, মিটার, টায়ার, হেডলাইট, বডি, ও চারটি ব্যাটারি।
পুলিশ জানায়, আসামিরা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা পরিকল্পিতভাবে আমিরুলকে হত্যা করে গাড়ির মালামাল বিক্রির উদ্দেশ্যে অংশগুলো আলাদা করে ফেলে দেয়।
পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, “সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন প্রমাণ করে যে, কোনো অপরাধীই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।”
এদিকে নিহত আমিরুলের পরিবার এখনো শোকে মুহ্যমান। তাদের প্রত্যাশা—দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে, যেন আর কোনো পরিবারের ছেলেকে এমনভাবে প্রাণ দিতে না হয়।
শেয়ার করুন