সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঘূর্ণিঝড় মোন্থায় উত্তরাঞ্চলে বিপর্যয় তলিয়ে গেছে ধানক্ষেত, ভেসে গেছে মাছ

অপু দাস, স্টাফ রিপোর্টার :
ঘূর্ণিঝড় মোন্থা-এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষিজীবন। অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, ধানক্ষেত ও পুকুর। ভেসে গেছে মাছ, নুয়ে পড়েছে পাকা ধান। এক কথায় প্রকৃতির এই আঘাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠে এখন শুধুই পানির রাজত্ব। অনেক জায়গায় কান্দর — অর্থাৎ নিচু জমিগুলো বিলের মতো তলিয়ে গেছে। ধান গাছের শুধু শীর্ষাংশ দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, এরকম টানা বর্ষণ তারা বহু বছরেও দেখেননি।
দীর্ঘ সময়ের বৃষ্টিতে মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে। ফলে কাটার সময় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সবাইকে একসাথে নিজের ফসল তুলতে হবে বলে শ্রমিক পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
বরেন্দ্র অঞ্চলে সাধারণত নিচু জমি ‘কান্দর’ নামে পরিচিত। এসব জায়গায় পানি ওঠে না বললেই চলে। কিন্তু এবার অস্বাভাবিক বর্ষণে সেই কান্দরও পানির নিচে। এতে কৃষকেরা মনে করছেন, এই মৌসুমে উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে।
বৃষ্টির প্রভাবে বহু পুকুর ও খামার প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গেছে। অনেক এলাকায় দেখা গেছে, মানুষ দল বেঁধে বিল ও খাড়িতে মাছ ধরছে। টানা বৃষ্টিতে নদীর স্রোতের দিকও বদলে গেছে, যা স্থানীয়দের কাছে এক বিরল দৃশ্য।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে শুধু কৃষিই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ ঘরবাড়িও। কাঁচা মাটির ঘর ধসে পড়েছে বহু স্থানে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বা উঁচু জায়গায়।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, কয়েকশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসল ও মাছের ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বৃষ্টিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও মাঠ পর্যায়ে অনেকে বলছেন, প্রকৃত ক্ষতি সরকারি হিসাবের চেয়েও অনেক বেশি।
মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন এবং জলাবদ্ধতা ব্যবস্থাপনার অভাবই এই ক্ষতির মূল কারণ। অনেক উঁচু জমিও এবার পানির নিচে চলে গেছে।
প্রকৃতির এই অপ্রত্যাশিত আঘাতে উত্তরাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। ক্ষতির ভার সামলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন সাধারণ কৃষক ও মাছচাষিরা।
শেয়ার করুন