জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণভোটের সময়সূচি নিয়ে আপাতত অপেক্ষাশীল এবং তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থানই বজায় রেখেছে। দলের একাধিক সূত্র জানায়, তারা জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একদিনে আয়োজন হলেও সেটি গ্রহণ করবে। আবার, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের বিষয়েও তাদের কোনো আপত্তি নেই।
তবে এনসিপি জোর দিয়ে বলছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে। এনসিপি দাবি করছে, আদেশ প্রকাশের আগে এটি জাতির সামনে উন্মুক্ত করা উচিত। পরে আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সনদে স্বাক্ষর বা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
গণভোটের সময় নির্ধারণকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান এখনো তীব্র। বিএনপি চাইছে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসাথে হোক, যেখানে জামায়াতের দাবি, জাতীয় নির্বাচনের আগে, নভেম্বর মাসে গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। তাদের অবস্থান আপাতত অনড়। অন্যদিকে, এনসিপি গণভোটের সময় নিয়ে এতটা কঠোর নয়।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেছেন, “আমাদের রিজিড অবস্থান নেই, তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে তা ভালো হবে বলে মনে করি।”
এনসিপি দুটি মূল যুক্তি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা মাধ্যমে আদেশ জারির পক্ষে। প্রথমত, যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে এই আদেশ আসছে, বর্তমান রাষ্ট্রপতি সেই আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেন না। দ্বিতীয়ত, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এমন কোনো অধ্যাদেশ জারি করতে পারবেন না, যা সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন করে। জুলাই সনদে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের বিষয় রয়েছে, তাই রাষ্ট্রপতির পক্ষে এটি সম্ভব নয়।
এনসিপি সূত্রের মতে, সরকারের জারি করা আদেশ প্রকাশিত হলে তারা তা পর্যালোচনা করবেন এবং তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য দুটি বিকল্প সুপারিশ জমা দিয়েছে। সনদের ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টি সংবিধান সংশোধনের বিষয়। যদিও ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবে ৩৬টিতে রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত আছে, কমিশন সুপারিশে আদেশ খসড়ার তফসিলে শুধুমাত্র প্রস্তাবগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে, ভিন্নমতের বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অর্থাৎ সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভিন্নমত বাধ্যতামূলক বিবেচিত হবে না।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি হবে। এরপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সময়মতো সংস্কার না হলে সংশোধনী প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে। এনসিপি মনে করছে, আদেশ প্রকাশের আগে এটি জাতির সামনে উন্মুক্ত করা উচিত এবং রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আদেশ জারি করুন।





