শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গণভোটের আগে আয়োজন অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপূর্ণ। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে দলের চেয়ারম্যানের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে গণভোট আয়োজন করা সম্ভব নয়। সময়ের স্বল্পতা, বিপুল ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ—এই সব কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের আগে গণভোটের কোনো প্রয়োজন নেই।”

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে সকল সুপারিশ এসেছে, সেখানে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনায় আলোচিত প্রসঙ্গগুলোর কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে সুপারিশগুলো একপেশে ও জবরদস্তিমূলক হয়ে গেছে, যা জাতিকে বিভক্ত করবে এবং অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদে অকল্যাণ ডেকে আনতে পারে।”

ফখরুল অভিযোগ করেন, “সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না হয়, তবে গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হবে—এটি অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। সংবিধানীয় প্রক্রিয়ায় কোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।”

তিনি বলেন, “বিকল্প-২ প্রস্তাব অনুযায়ী জুলাই সনদ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সরাসরি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট গণভোটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এটি প্রমাণ করে যে, দীর্ঘ এক বছরের আলোচনা সময়, অর্থ এবং প্রচেষ্টা বর্জ্য হয়ে গেছে।”

বিএনপির মহাসচিব আরও উল্লেখ করেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সকল অনুষ্ঠান বিটিভি ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে। ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা কেবল আলোচনার ভিত্তিতে প্রণীত সনদে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু চূড়ান্ত কপি আমাদের হাতে আসার পর দেখা গেছে, ঐকমত্যে সম্মত কিছু দফা আমাদের অগোচরে পরিবর্তন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরকারি/বেসরকারি অফিসে টাঙানোর বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে, যা প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিপত্র থাকা সত্ত্বেও চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।”

ফখরুল বলেন, “বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষের দল, ব্যক্তি ও সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে সার্বিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাষ্ট্র কাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান এবং মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন