রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কেশবপুরের মজিদপুরে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে তিন দিনব্যাপী জগদ্ধাত্রী পূজা

আব্দুর রহিম রানা, যশোর প্রতিনিধি :
আজ বৃহস্পতিবার থেকে যশোরের কেশবপুর উপজেলার মজিদপুরে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী শ্রীশ্রী জগদ্ধাত্রী পূজা। রামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, মজিদপুর আয়োজন করেছে এই পূজা মহোৎসবের। আয়োজনে সহযোগিতা করছে সারদা সংঘ ও বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, কেশবপুর শাখা।
১২ কার্ত্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (৩০ অক্টোবর ২০২৫) বৃহস্পতিবার থেকে ১৪ কার্ত্তিক (১ নভেম্বর) শনিবার পর্যন্ত চলবে এই পূজা উৎসব। আয়োজকদের ভাষায়, “রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের মূল লক্ষ্য ধর্ম নয়, মানুষ। সকল ধর্মের মর্মবাণী এক—সত্য, প্রেম ও সেবা। এই পূজার মধ্য দিয়েই আমরা সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই।”
আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে শিশুদের মাঝে নতুন বস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার সূচনা হবে। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে প্রতিমার অধিবাস ও আমন্ত্রণ অনুষ্ঠান। শুক্রবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে পূজার সূচনা, এরপর পুষ্পাঞ্জলি, মধ্যাহ্ন পূজা ও প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে হোম যজ্ঞ, অপরাহ্ন পূজা ও সন্ধ্যার আরতির পর শুরু হবে ভক্তিমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীরা পরিবেশন করবেন ভজন, আবৃত্তি ও নৃত্য, যা ভক্তিময় পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে।
শেষ দিন শনিবার সকালে দর্পণ বিসর্জন ও সিঁদুর দান, বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তিন দিনের এই উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ভক্তদের ফুল, দূর্বা ও বেলপাতা সঙ্গে নিয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
পূজা উপলক্ষে সেবাশ্রম প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে মনোরম আলোকসজ্জায়। প্রতিমা দর্শনে প্রতিদিন ভক্তদের ঢল নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধূপ-ধুনোর গন্ধে ভরে উঠবে চারপাশ, ভক্তদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে প্রার্থনার মন্ত্র— “দয়া রূপে দয়া দুষ্টে দয়া দুঃখমোচনী সর্বপঞ্জারিকে দুর্গে জগদ্ধাগ্রে নমো নমঃ।”
পূজার পাশাপাশি থাকবে সামাজিক সেবামূলক নানা উদ্যোগ—শিশুদের নতুন বস্ত্র বিতরণ, দরিদ্র পরিবারের জন্য প্রসাদ বিতরণ এবং দান গ্রহণ কর্মসূচি। আয়োজকদের মতে, “এটি শুধু পূজা নয়, সমাজসেবারও অংশ। ভক্তি আর মানবতা আমাদের কাছে একই সূত্রে বাঁধা।”
স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও এই পূজাকে ঘিরে মজিদপুরে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষ সমান উৎসাহে অংশ নিচ্ছেন, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী—“যে কোন ধর্ম, যে কোন ভাষা ঘৃণ্য বা অশ্রঙ্কার নয়”—এই বাণীর প্রতিফলন দেখা যায় মজিদপুরের পূজামণ্ডপে। আর শ্রী রামকৃষ্ণের চিরন্তন বাণী—“আমার ধর্ম ঠিক আর অপরের ধর্ম ভুল—এ মত ভালো না বাবা; সবাই ভিন্ন পথে গিয়ে একই গন্তব্যে পৌঁছায়”—এই দর্শনই প্রতিফলিত হচ্ছে ভক্তদের কর্মে ও ভাবনায়।
রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের পূজা মানে শুধু আরাধনা নয়, এটি মানুষের অন্তর জাগরণের এক প্রয়াস। তাই প্রতি বছরই এই উৎসব হয়ে ওঠে ভক্তি, মানবতা, সেবা ও সম্প্রীতির মিলনমেলা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, “যে কোনো দান বা সহযোগিতা সাদরে গৃহীত হবে—কারণ এই পূজা মানুষের ভালোবাসা ও অংশগ্রহণেই পূর্ণতা পায়।”
দুর্গে জগদ্ধাগ্রে নমো নমঃ—এই মন্ত্রে মুখরিত হবে কেশবপুরের আকাশ, আর পূজার আলোয় আলোকিত হবে মজিদপুরের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম ও আশপাশের অঞ্চল।
শেয়ার করুন