রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কালিয়াকৈরে গোলয়া পাগল নাথের মেলা প্রজন্মের পর প্রজন্ম করে আসছে 

গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা গোলয়া পাগল নাথের মেলা প্রজন্মের পর প্রজন্ম করে আসছে।  গোলয়া গ্রামের ইতিহাস ও  ঐতিহ্যের  ১৬৩ তম পাগল নাথের  অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দিনব্যাপী গোলয়া দূর্গা মন্দির প্রাঙ্গনে এ মেলা  সম্প্রীতির বন্ধন  অনুষ্ঠিত হয় ।  পালল নাথের মেলা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী  মেলা গুলোর একটি। পাগল নাথের মেলা আমাদের লোক ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এ মেলা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষের মনে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও মানবতার বার্তা দিয়ে আসে ।শত শত মানুষের আগমনে পাগল নাথের মেলা হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর।
এক সময় বাংলাদেশের  যোগাযোগ ব্যবস্হা, চিকিৎসা ব্যবস্হা, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্হা ও জীবন যাএা উন্নত ছিল না। দেশে
দেশের বেশির ভাগ মানুষ ছিল কৃষি নির্ভর। গ্রামীন জনগোষ্টী মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। কার্তিক মাস থেকে হালকা শীত পড়া শুরু করে । কার্তিক মাসের পর থেকে শীত বাড়তে থাকত। তখন  আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি দেখা দিত। যেহেতু তখনকার সময় চিকিৎসা সেবা উন্নত ছিল না সেই কারনে মানুষ রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন নিয়ম কানুন পালন করত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেক মানুষ মাছ মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকত।
আজ থেকে ১ শত ৬৩  বছর আগে চিকিৎসা ব্যবস্হা উন্নত ছিল না। কার্তিক মাস থেকে শুরু করে শীতের দিনে বিভিন্ন রোগে  মানুষ মারা যেত বেশি। তাই গোলয়া গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতো বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাগল নাথের মেলা শুরু করে। এ গ্রামের বংশক্রমানুসারে পাগল নাথের মেলা পালন করে আসছেন। প্রতি বছর কার্তিক মাসে ১ তারিখ থেকে  ৭ তারিখ  পর্যন্ত   গোলয়া  গ্রামের মানুষ নিরামিষ খেয়ে থাকে।  প্রতিরাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে  গ্রামের মানুষ নাম কীর্তন করে থাকে । সপ্তম দিন সারাদিন কীর্তন,  পাগল নাথ গান ও ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরন করা হয় ।
 ড. চিওরঞ্জন রায় জানান, এক সময় গোলয়া গ্রামের  প্রধান উৎসব ছিল পাগল নাথের মেলা। এ মেলায় ছোট বেলা  থেকে দেখে আসছি । এ মেলা গোলয়া গ্রামের সম্প্রীতির এক অপূর্ব বন্ধন।  পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য আমরা আজও রক্ষা করে চলেছি।  গ্রামে এখন দুর্গাপূজা, অষ্টপ্রহর, স্বরসতী পূজা সহ বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়। আধুনিকতার ছোঁয়া এ গ্রামেও লেগেছে। পূর্ব পুরুষদের বিশ্বাস কে ধরে রেখে আজও আমরা  প্রতি বছর পাগল নাথে উৎসব পালন করে থাকি ।
গোলয়া গ্রামের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ  ভাবে পালন করা হয় পাগল নাথের মেলা। বোয়ালী, শ্রীপুর, রঘুনাথপুর, সিকদার চালা, বেড়া চালা, শিমুলচালা, সোনাতলা, তালতলী, বাঁশতলী,গাছবাড়ী সহ  আশে পাশের গ্রামের মানুষসহ বিভিন্ন  দূর দুরান্ত থেকে  ভক্তরা এ মেলায় আসেন ।  কিশোর কুমার রায়  জানান, পাগল নাথ আমাকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। তাই তো আমি ও আমার পরিবার পাগল নাথের ভক্ত। শিক্ষক খুশীমোহন রায় জানান,গোলয়া গ্রামের মানুষ ৭ দিন নিয়মতান্ত্রিক  ভাবে নিরামিষ খেয়ে থাকে ।পাগল নাথ আমাদের সকল দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। তাই আমাদের মনের গভীরে বিশ্বাসে পাগল নাথ আছে।
কালের বিবর্তনে সাথে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। আধুনিক যুগে ওয়ানটাইম প্লেট, গ্লাস সহ বিভিন্ন জিনিসপএ  বের হয়েছে।  তারপরও  পাগল নাথের প্রসাদ  কলাপাতায় প্রসাদ  বিতরণ করে ঐতিহ্য রক্ষা করা হচ্ছে। ভক্তদের মাঝে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে প্রসাদ বিতরনের জন্য সবুজ রায়, আকাশ রায়, স্বপন রায়, তপন রায়, ভবেন রায়, রাজন রায়, কনক রায়, তাপস রায় সহ ৫০ সদস্য বিশিষ্ট প্রসাদ বিতরন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পূর্বে এ মেলা উপলক্ষে  রাতে নাটক, যাএা অনুষ্ঠিত হতো। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আর নাটক, যাএা, গান, অনুষ্ঠিত হয় না। তবে পাগল নাথের অন্যান্য অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবে পালন করা হয়। মেলার দিন রাতে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক কালী পূজা। পাগল নাথের মেলার দিন স্হানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা এসে সনাতন ধর্মের মানুষের সাথে মতবিনিময় করতে মেলায় আসেন । এলাকায় সকল ধর্মের মানুষের উপস্হিতিতে মেলা হয়ে উঠে উৎসবমুখর। এ মেলা সম্প্রীতির রক্ষার এক অনন্য  মিলন বন্ধন। এ মেলাকে ঘিরে আশে পাশের  এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এক মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। গোলয়া গ্রামে বিরাজ করছে আনন্দমুখর পরিবেশ।
শেয়ার করুন