ইতালিতে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকরা শীর্ষ তিনে অবস্থান করছে। দেশটিতে বর্তমানে ৫৪ লাখ বিদেশি নাগরিক বসবাস করছেন এবং তাদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতালির জনমিতি বিশ্লেষণ করে এই তথ্য দিয়েছে কারিতাস-মিগ্রান্তেস ফাউন্ডেশন।
সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালির মোট কর্মশক্তির ১০.৫ শতাংশ বিদেশি নাগরিক দ্বারা পূর্ণ, আর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ১১.৫ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ৩৪তম কারিতাস-মিগ্রান্তেস অভিবাসন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতালির মোট জনসংখ্যার ৯.২ শতাংশ বিদেশি। প্রতিবেদনটি ১৪ অক্টোবর রোমে ‘বিদেশি বংশোদ্ভূত তারুণ্য: ইতালির রূপান্তর ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানকালে প্রকাশিত হয়।
বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে রোমানিয়া, মরক্কো, আলবেনিয়া, ইউক্রেন ও চীনকে প্রধান উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষভাবে বাংলাদেশি এবং পেরু নাগরিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইতালির অর্ধেকেরও বেশি প্রদেশে নতুন রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে রয়েছেন।
বিদেশি নাগরিকরা মূলত মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে বসবাস করছেন, যদিও অনিয়মিত অভিবাসীরা দক্ষিণের গ্রাম ও মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতেও ছড়িয়ে আছেন। তাদের আবাসন পরিস্থিতি অনিশ্চিত এবং স্থানীয় প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভরশীল। কারিতাস-মিগ্রান্তেসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটিতে তীব্র আবাসন সংকট বৈষম্য, দুর্দশা এবং নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ফলে বিদেশি নাগরিকরা ইতালীয় সমাজে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন।
জন্মহার নিয়ন্ত্রণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বিদেশি নাগরিকদের অবদানও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালে ইতালিতে ৩ লাখ ৭০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, যার ২১ শতাংশের বেশি শিশু অন্তত একজন বিদেশি অভিভাবকের। একই বছরে ২ লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষ ইতালির নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। বিশেষ করে শহুরে ও গ্রামীণ এলাকায় বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি নিম্নমুখী জন্মহারকে কিছুটা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছে এবং স্কুল, সেবা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রেখেছে।
বর্তমানে ইতালিতে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বিভিন্ন খাতে কর্মরত, যার মধ্যে ২৫ লাখের বেশি বিদেশি। গত বছর মোট কর্মসংস্থানের হার বেড়ে ৬১.৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা নাগরিকদের মধ্যে কর্মসংস্থান কমে ৫৭.৬ শতাংশে নেমেছে। বেকারত্বের হার মোটে কমেছে ১৪.৬ শতাংশে; এতে ইতালীয়দের বেকারত্ব ১৬ শতাংশ থেকে কমেছে, আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে এটি ৫.৯ শতাংশ। তবে বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে এখনও ১০.২ শতাংশ বেকারত্ব রয়েছে, যেখানে ইতালীয়দের মধ্যে মাত্র ৬.১ শতাংশ।
বিদেশি নাগরিকরা ক্রমশ ভালো করছে। ২০২৪ সালে নতুন চাকরির সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করে ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৬টি চুক্তি নিবন্ধিত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। এই নিয়োগের বেশিরভাগ হয়েছে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, যেখানে বিদেশিরা কর্মশক্তির ২১ শতাংশের বেশি অংশ নিচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চল ও দ্বীপগুলোতে অংশগ্রহণ কম (১৬.৬ শতাংশ), তবে সেখানে সম্প্রতি ১৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রেও বিদেশি প্রজন্মের প্রভাব বড়। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ইতালিতে ৯ লাখ ১০ হাজার ৯৮৪ বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল, যা মোট শিক্ষার্থীর ১১.৫ শতাংশ। নতুন প্রজন্ম আরও বৈচিত্র্যময় ও বিশ্বজনীন সংস্কৃতি ধারণ করছে। যদিও অনেক শিশু ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের নাগরিকত্ব এখনও নেই, ফলে তারা বৈধভাবে ইতালীয় হলেও নাগরিক অধিকার পুরোপুরি পাচ্ছেন না।
এই প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, বিদেশি নাগরিকরা ইতালিতে কেবল জনসংখ্যা ও অর্থনীতিতে নয়, সামাজিক কাঠামো ও শিক্ষা ব্যবস্থাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা বিভিন্ন প্রদেশে রেসিডেন্স পারমিটের ক্ষেত্রে শীর্ষ তিনে উঠে এসেছে, যা ইতালির সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর প্রভাব ফেলছে।





