জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর :
যশোরের অভায়নগরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র নোয়াপাড়া শাখার সাবেক ম্যানেজার মোস্তফা মেহেদী হোসাইন চৌধুরী, সাবেক ফরেন একচেঞ্জ ইনচার্জ সাফারুল ইসলাম এবং ম্যানেজার (অপারেশন) আব্দুল হান্নানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩নভেম্বর) বেলা ১২টায় নোয়াপাড়া ইসলামী ব্যাংকের সামনে মহাসড়কে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা মোস্তফা মেহেদী হোসাইন চৌধুরী, সাফারুল ইসলাম
ও আব্দুল হান্নান ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যাংকের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কোটি কোটি টাকার অনৈতিক লেনদেন করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তারা নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে এবং দায় অন্যের ওপর চাপাতে নোয়াপাড়ার সৎ ও নির্দোষ ব্যবসায়ীদের নাম জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দুজনকে ব্যাংকের ওই শাখা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও নোয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা দুদকের মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বক্তারা আরও বলেন, এই কর্মকর্তারা দেশ-বিদেশে সক্রিয় কিছু অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করছে। এই চক্রের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বর্তমানে
ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানরত এক প্রতারক ব্যবসায়ী এবং তার দেশীয় কয়েকজন দোসরও জড়িত বলে অভিযোগ তোলা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এই চক্র শুধু নোয়াপাড়ায় নয়- ঢাকা, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় সৎ ব্যবসায়ী সমাজের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এর ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং ইসলামী ব্যাংকের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
মানববন্ধনে বক্তারা ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রকৃত রূপ উদঘাটন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারা বলেন, দেশি-বিদেশি চক্রে জড়িত মূল হোতাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। অন্যথায় নোয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা ঢাকায় গিয়ে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছে।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত ডলার রেট বৃদ্ধির ফলে সারাদেশের মতো নোয়াপাড়ার আমদানিনির্ভর ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে আবেদন করলে সাবেক ম্যানেজার ও তার সহযোগীরা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দিলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত সেই হুমকিই বাস্তবে রূপ নেয়। কোনো প্রাথমিক তদন্ত বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় দুদকের মাধ্যমে মামলা করা হয়।
মানববন্ধনের আয়োজকরা জানান, নোয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা বিবেকের তাড়নায় রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। চোখের সামনে একের পর এক অন্যায় ঘটতে দেখেও নীরব থাকা সম্ভব নয়। তারা বলেন, এটি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে নয়- বরং সততা, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার পক্ষে, ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানের অংশ হিসেবেই এই প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে
যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের উল্টো ফ্যাসিবাদের দোসর বলা হচ্ছে, যা নিন্দনীয় ও হাস্যকর।
বক্তারা একবাক্যে ঘোষণা দেন, “আমরা দুর্নীতির বিচার চাই, নির্দোষ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা চলবে না। ইসলামী ব্যাংকের ভাবমূর্তি রক্ষায় প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিবেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে চাই।”
আয়োজকরা জানান, প্রশাসন ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে সব কর্মসূচি আইনসম্মত ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত হবে।
বক্তারা অবিলম্বে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ইসলামী ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মোস্তফা মেহেদী হোসাইন চৌধুরী, সাফারুল ইসলাম ও আব্দুল হান্নান গংদের চিহ্নিত করে
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করে রক্ষা করার যে কোনো প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ,ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন, সালেহ্ আহমেদ, সোহাগ হোসেন, আব্দুল কাশেম, রাজু আহমেদ, আল আমিন, জাকির হোসেন, শাহিন রেজা প্রমুখ।





