সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর আফগানিস্তান

উত্তর আফগানিস্তানে আবারও শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সোমবার ভোরে মাজার-ই-শরিফের নিকটবর্তী এলাকায় কম্পনটি অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৩। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল খোলম এলাকার কাছে, ভূমির প্রায় ২৮ কিলোমিটার গভীরে।

খোলম শহরে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ এবং আশপাশের বড় শহর মাজার-ই-শরিফে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। হঠাৎ কম্পনে তারা আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অনেকেই মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা বলেছে, প্রাথমিক জরিপ শেষে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

ইউএসজিএস সতর্ক করেছে, ভূমিকম্পটির কারণে বড় ধরনের প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে। সংস্থাটি ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করেছে, যা সম্ভাব্য ব্যাপক দুর্যোগের ইঙ্গিত দেয়।

এই ভূমিকম্পটি মাত্র দুই মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে আঘাত হানা দ্বিতীয় বড় কম্পন। এর আগে আগস্ট মাসে পূর্বাঞ্চলে ৬ দশমিক ০ মাত্রার ভূমিকম্পে দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তখন কাঁচামাটির তৈরি অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। দেশটির অনেক গ্রামীণ এলাকায় এখনো ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরেই মানুষ বসবাস করে, যা ভূমিকম্পে সহজেই ধসে পড়ে।

আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। দেশটি হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত, যেখানে ইউরেশীয় ও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণেই দেশটিতে প্রায়ই মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রয়টার্স’-এর তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫৬০ জন মানুষ ভূমিকম্পে মারা যায় এবং প্রায় ৮ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ৫ দশমিক ০ মাত্রা বা তার বেশি শক্তির অন্তত ৩৫৫টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো প্রস্তুত রয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সীমিত সম্পদের কারণে উদ্ধার তৎপরতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

শেয়ার করুন