মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: ভোটে ত্রিমুখী লড়াই, এগিয়ে জোহরান মামদানি

নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে আজ ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। শহরের প্রায় ৫০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার আজ নতুন মেয়র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশনসের তথ্যমতে, ভোটের আগে নয় দিনে প্রায় ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৩১৭ জন ভোট দিয়েছেন, যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি আগাম ভোট।

জরিপে এগিয়ে জোহরান মামদানি
রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকসের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন। স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো রয়েছেন ৩১ দশমিক ৮ শতাংশে, আর রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ কুমোর চেয়ে প্রায় ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন জোহরান।

তবে নির্বাচনের আগের রাতে কুমোকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। তাঁদের শেষ মুহূর্তের এই সমর্থন ভোটারদের মত বদলাবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত নয়।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরানের জনপ্রিয়তার কারণ
ডিএসএ (Democratic Socialists of America)-এর সদস্য জোহরান মামদানি বিনা মূল্যে শিশুযত্ন, বিনা ভাড়ার গণপরিবহন এবং বাড়িভাড়ার নিয়ন্ত্রণের মতো জনবান্ধব নীতি দিয়ে তরুণ ও প্রগতিশীল ভোটারদের আকৃষ্ট করেছেন।

প্রতি চার বছর অন্তর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন হয়। কোনো প্রার্থী সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত হলেও পরে আদালত তাঁকে অভিযোগমুক্ত ঘোষণা করে। এবার তিনি দলের মনোনয়ন না পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।

তিন শিবিরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
এবারের নির্বাচনে তিন ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন— উদারপন্থী, রক্ষণশীল ও মূলধারার রাজনীতি এক মঞ্চে মুখোমুখি। এটি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে বিরল ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জরিপ কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকস জানিয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে মামদানি ও কুমোর ব্যবধান ৩ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করছে। প্রতিটি জরিপেরই কিছু ভুলের সীমা (margin of error) থাকে, যা ফলাফলে প্রভাব ফেলে।


কিছু জরিপ সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের ভিন্নভাবে গণনা করে, ফলে পার্থক্য দেখা যায়। তবে একাধিক জরিপের গড় বিশ্লেষণ করলে ফলাফল সাধারণত কিছুটা নির্ভরযোগ্য হয়।

এ বছরের শুরুতে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রাইমারি নির্বাচনের সময়ও জরিপগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছিল—তখন কুমোর এগিয়ে থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হলেও শেষে বিপুল ব্যবধানে জোহরান মামদানি জয়ী হন।

জরিপ প্রক্রিয়া কেমন হয়
এমারসন কলেজ, ম্যারিস্ট কলেজ ও কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি নিয়মিতভাবে জনমত জরিপ পরিচালনা করে। ফোন, মেসেজ বা অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে এলোমেলোভাবে নির্বাচিত ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়— তাঁরা কাকে ভোট দেবেন, কোন ইস্যুগুলো তাঁদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এবং বর্তমান প্রশাসনের প্রতি তাঁদের সন্তুষ্টি কেমন।

প্রতিটি জরিপেই নমুনার আকার ও ভুলের সীমা উল্লেখ থাকে, যাতে ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা মূল্যায়ন করা যায়।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিউইয়র্কে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ছিল ৫১ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট, ১১ শতাংশ রিপাবলিকান এবং বাকি ১১ লাখ ভোটার কোনো দলেই নিবন্ধিত নন।

শেয়ার করুন